পাটকলগুলো বন্ধ থাকলেও সেখানে বিপুল সংখ্যক জনবল রয়েছে

0

আড়াই বছর উৎপাদন বন্ধ। তবে খুলনার ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে ৯ জন উৎপাদন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। কলকারখানা বন্ধ থাকায় পাট কেনার প্রয়োজন নেই, তবে প্রতিটি মিলেই বেশ কয়েকজন ক্রয় কর্মকর্তা রয়েছেন। রয়েছে মান নিয়ন্ত্রণ, বিপণন ও কারখানা তদারকি কর্মকর্তা। পাটকল পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ১ হাজার ৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া অন্য কোনো চাকরি নেই। তবে তাদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে সরকার ব্যয় করছে ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

এদিকে বিপুল জনবল থাকা সত্ত্বেও জুটমিলের নিরাপত্তায় আরও ৮২ জন আনসার সদস্য নেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে তাদের দিতে হয় ১৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এটি একটি অদূরদর্শী ও বিবেচনাহীন কাজ বলে মন্তব্য করেছেন খুলনার নাগরিক নেতারা।

পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, বিজেএমসির কড়া প্রশাসন, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। পাটকল বন্ধের জন্য শ্রমিকদের দায়ী করা হলেও পাটকল পরিচালনায় দূরদর্শিতার অভাব ছিল। এ জন্য বিজেএমসি বিলুপ্ত করে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় পাটকল চালু করতে হবে। তাহলেই পাট শিল্পের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) তথ্য অনুযায়ী, এই ৯টি পাটকল ২০২০ সালের ১ জুলাই বন্ধ হয়ে যায়। ৭টি পাটকলের ৩৩ হাজার ৩০৬ জন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৩০ জন স্থায়ী শ্রমিক এবং ১৪ হাজার ২৭৬ জন অস্থায়ী শ্রমিক। খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলের প্রায় চার হাজার দৈনিক মজুরি শ্রমিক বিজেএমসির তালিকায় নেই।

সূত্র জানায়, শ্রমিকদের বরখাস্ত করা হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরিতে রয়েছেন। গত অক্টোবর পর্যন্ত ৯টি মিলে কর্মরত ছিলেন ১ হাজার ৪৩ জন। তাদের মধ্যে চারজন অবসর ছুটিতে গেছেন। তবে বিজেএমসি থেকে কতজন তা জানা যায়নি। গত আড়াই বছরে তাদের বেতন বাবদ মোট ব্যয় হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। বর্তমানে ক্রিসেন্ট জুট মিলে ১৮৯ জন লোকের বৃহত্তম কর্মী রয়েছে। এর পরেই রয়েছে প্লাটিনাম ও খালিশপুর জুট মিলস। দুটি পাটকলে ১৬৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া স্টার জুটমিলে ১২২ জন, জেজেআইতে ১০৭ জন, দৌলতপুরে ৯৬ জন, ইস্টার্নে ৮৩ জন, কার্পেটিংয়ে ৬৬ জন এবং আলিম জুটে ৪৪ জন কাজ করছেন।

ক্রিসেন্ট জুট মিল পরিদর্শন করা হয়, এবং কারখানার গেট তালা দেওয়া হয়। একসময়ের কোলাহলপূর্ণ মিল এলাকায় এক ভয়ঙ্কর নীরবতা। প্রশাসনিক ভবনের সামনে কয়েকজন কর্মকর্তা সূর্যস্নান করছেন। ভিতরে টেবিল-চেয়ারে লোক নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নিরাপত্তারক্ষী বলেন, প্রতিদিনই সবাই আসে এবং চলে যায়।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখন তিনটি প্রধান কাজ। পাটকলের মোট আয়তন ২১৩ একর, এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে; II অডিট আপত্তি এবং মামলা নিষ্পত্তি এবং হিসাব বিভাগ ও প্রশাসনের রুটিন কাজ। কারখানা বন্ধ থাকায় যাদের কাজ নেই তাদের অন্য কাজ দেওয়া হয়েছে।

খালিশপুর জুট মিলের প্রজেক্ট ম্যানেজার খলিলুর রহমান জানান, পাটকল বন্ধ থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিজেএমসি আড়াই বছর ধরে কর্মী ছাড়াই হাতি খাচ্ছে। একেক কর্মকর্তার বেতন ৫০-৬০ হাজার টাকা, কারো কোনো কাজ নেই। কিন্তু ক্ষতির দায় চাপানো হচ্ছে শ্রমিকদের। পাটকল ধ্বংসের অন্যতম কারণ বিজেএমসির কর্মকর্তারা।

বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী বলেন, পাটকলগুলো লিজের মাধ্যমে চালুর চেষ্টা চলছে। এ জন্য এত দিন জনবলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। এ ছাড়া পাটকল বন্ধের প্রথম বছর শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধে ব্যয় হয়। দ্বিতীয় বছরে বাড়তি জনবলের বিষয়টি সামনে আসে। অনেক বিকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বেশির ভাগ পাওনা পরিশোধ করেছেন শ্রমিকরা: বিজেএমসি থেকে জানা গেছে, পাটকলের শ্রমিকদের বেশির ভাগ বকেয়া পরিশোধ করেছে তারা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭টি পাটকলের ১৪ হাজার ৭৯৫ জন শ্রমিক নগদ ৭৬০ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র পেয়েছেন ৬৫৮ কোটি টাকা। ২৩৫ স্থায়ী শ্রমিক বকেয়া আছে. এ ছাড়া ১৩ হাজার ৮৮৯ জন অস্থায়ী (বদলি) শ্রমিক পেয়েছেন ১০৮ কোটি টাকা। বাকি আছে ৩৮৭ জন শ্রমিক। খালিশপুর ও দৌলতপুর পাটকলের ৪ হাজার দৈনিক শ্রমিকের বেতন এখনো ঠিক হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *