সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ।সীমানায় বড় ধরনের পরিবর্তনে ইসির চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক চাপ
গত দুই নির্বাচনের মতো আগামী সংসদ নির্বাচনেও সংসদীয় আসনের সীমানায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, দেশের সংসদীয় আসনের বিদ্যমান সীমানা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যা সমন্বয়ের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। তবে রাজনৈতিক বিরোধ এড়াতে এবার সংসদীয় আসনের সীমানায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, নতুন আদমশুমারির প্রতিবেদন না পাওয়া গেলে পুরোনো দিয়েই আসন বিন্যাসের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। আগের দুই নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক চাপে ইসিকে সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ থেকে সরে আসতে হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, নতুন আদমশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে ইসি। এই অপেক্ষা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। যদি সেই সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন না পাওয়া যায়, তাহলে পুরানো আদমশুমারির তথ্য ব্যবহার করে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। খসড়া সীমানা মে মাসের মধ্যে ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
সর্বশেষ আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। ২০২২ সালের আদমশুমারির প্রকল্প পরিচালক (পিডি) দিলদার হোসেন বলেন, তারা ইসি থেকে অনুরোধ করা তথ্য পাঠিয়েছেন। ২০২৪ সালের জুন মাসে চূড়ান্ত আদমশুমারি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। এটি আগে প্রকাশিত হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয় তথ্য সুনির্দিষ্ট হলে তারা সাহায্য করতে প্রস্তুত। ইসি কোনো তথ্য চায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ একটি জটিল ও প্রযুক্তিগত কাজ বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। এটা অনেক সময় লাগে। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, রাজনৈতিক চাপে কমিশনের পক্ষে স্বাধীনভাবে আসন বিন্যাস করা সম্ভব হয় না। ব্যাপক পরিসরে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত নামমাত্র পরিবর্তন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এই কাজ শেষ করতে হবে। জনসংখ্যার সমন্বয়ে মন্ত্রী-এমপিদের আসন বদলানো হলে তারা এটাকে ইতিবাচকভাবে নেয় না। আর যদি আপনি জনসংখ্যার সমন্বয় করতে চান, তাহলে গ্রামের তুলনায় শহরে আসন সংখ্যা বাড়ে। এই প্রক্রিয়ায়, কিছু নির্বাচনী এলাকা বাড়ে, আবার কিছু হ্রাস পায়। আবার আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন এলাকার ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়টিও রয়েছে সংশ্লিষ্ট এমপিকে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন ভোটের ছন্দপতন হবে। এ কারণে ইসি জনসংখ্যার চেয়ে আঞ্চলিক অখণ্ডতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য প্রশাসনিক পরিবর্তনের তথ্য ইসিতে পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা।
নতুন সীমাবদ্ধতা আইন অনুযায়ী, ৩০০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচন করার জন্য সমগ্র দেশকে একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হবে। ভৌগলিক আদমশুমারির ভিত্তিতে যথাসম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টন করা উচিত। আইনে আরও বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিগত ১-ইলেভেন সরকারের আমলে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ১৩৩ নির্বাচনী এলাকার সীমানায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তবে ওই পরিবর্তন নিয়ে তৎকালীন শামসুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছিল বিএনপি।
ইসি আলমগীর বলেন, “ইসি এখনও আসন বিন্যাসের কাজ শুরু করেনি- এ তথ্য সঠিক নয়। মে মাসে এই কাজ শেষ হবে। কাজ হবে কম্পিউটারভিত্তিক। কোথাও পরিবর্তন হলে দ্রুত সেখানে দেখা যাবে।” সীমানা ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থাপনায় যারা থাকবেন, তাদের কাজে অনেক সুবিধা হবে। এ জন্য একটি সফটওয়্যার কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। সোর্স কোড কোথায় থাকবে, কী কী বৈশিষ্ট্য থাকবে, কী কী থাকবে। পরিবর্তনের ধরন- এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
আন্তর্জাতিক মানের সুশাসনের জন্য সচিব ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আন্তর্জাতিক মান হিসেবে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ পার্থক্য ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যমান সীমানার মধ্যে যেকোনো আসনে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ। আবার একটি আসনে ভোটার সংখ্যা আট লাখ। এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়.
২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত প্রাথমিক আদমশুমারি প্রতিবেদন অনুসারে, মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬.৫২ মিলিয়ন। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে, জনসংখ্যা ছিল ১৪.৪ মিলিয়ন। পুরো ঢাকা জেলায় এখন ২০টি সংসদীয় আসন রয়েছে। ২০১১ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ। এবারের আদমশুমারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ। একটি সাধারণ নিয়ম হিসাবে, প্রতিটি আসনের গড় জনসংখ্যা ৭৩৫,০০০ এর বিপরীতে দক্ষিণের জেলা জে।