ডোনাল্ড লু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা পেলেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিশ্রুতির বার্তা জানানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে, মাঠ পর্যায়ে এই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন এবং বাস্তবায়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা-ওয়াশিংটন বৈঠকে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সেখানে সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বার্তা দেওয়া হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এ সময় বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তুলে ধরলে যে কোনো দেশের গণতন্ত্রই ত্রুটিমুক্ত নয় তা তুলে ধরা হয়। এ সময় মার্কিন নির্বাচনের উদাহরণও দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির বিষয়ে ওয়াশিংটনকে আশ্বস্ত করা হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, সমাবেশের অধিকার, ভোটার ও বিরোধী দলের ভয়ভীতি থেকে স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ও বাস্তবায়নের জন্য।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে যে বার্তা পাওয়া গেছে তা হলো বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সংবিধানের সব নিয়ম মেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনসহ সবকিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বচ্ছভাবে নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের অবশ্যই একটি স্বচ্ছ, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে।
এ বিষয়ে আমেরিকানদের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রায়ই অনেকেই অভিযোগ করেন। আমরা বলেছি আপনাদের দেশেও অভিযোগ আছে। ৭৭ শতাংশ নাগরিক বলেছেন, গত মার্কিন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আমাদের দেশে এমন কিছু মানুষ আছে, যাদের কাজ এই কথাগুলো বলা, কিছু মানুষ বলবে। তবে সরকার অবাধ, মুক্ত, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চায়।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পরামর্শ আছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের কোনো পরামর্শ নেই। তবে আমরা আরও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের চেষ্টা করছি।
আনুষ্ঠানিক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতার শুরুতে ডোনাল্ড লু বাংলায় বলেন, “আমি বাংলাদেশে আসতে পেরে আনন্দিত, মনোমুগ্ধকর নদী বা সমুদ্র সৈকত এবং অতিথিপরায়ণ মানুষের দেশ।” বর্তমান বিশ্ব যখন শান্তি ও নির্বাচনের জন্য লড়াই করছে, তখন আমাদের দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব জোরদার করতে আমি এখানে এসেছি।
মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে, যখনই আমরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কোনো সমস্যা দেখব, তখনই পরামর্শ দেব। যুক্তরাষ্ট্র এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াব। আর এ বিষয়ে আমি বাংলাদেশের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করব।
র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, র্যাব নিয়ে আমাদের ভালো আলোচনা হয়েছে। আপনি যদি এই সপ্তাহে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি দেখেন, এতে বলা হয়েছে যে র্যাবের দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যা বেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, আমরা অ্যাকাউন্টে নিতে. এটি আসলেই মহৎ কাজ। র্যাব যে মানবাধিকারকে সম্মান জানিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতে পারে তার প্রমাণ।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডোনাল্ড লু বলেন, আমরা আমেরিকানরা অনেক ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। বৈঠকে শ্রমিক অধিকার নিয়ে আলোচনা হয়। যা বাংলাদেশের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সকালে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছি শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি নিয়ে। বাংলাদেশে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা বাড়াতে পারে। আমি শ্রম অধিকারের অগ্রগতির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে (আইপিএস) বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইপিএস নিয়ে আমাদের ভালো আলোচনা হয়েছে। এটি একটি কৌশল, যোগদান করার জন্য একটি ক্লাব নয়. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইপিএসের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য আরও সম্পদ ও মনোযোগ দিতে চায়।
বাংলাদেশের পণ্যে জিএসপি সুবিধা ফেরত দেওয়ার প্রশ্নে মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়। আমরা এখনও বিশ্বের দেশগুলিতে জিএসপি সুবিধা দেওয়ার জন্য মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি. যখনই জিএসপি অনুমোদন আসবে, এই সুবিধা পাওয়ার তালিকায় প্রথম হবে বাংলাদেশ।