বড় শিল্পনগর ঘিরে বিনিয়োগের সম্ভাবনা।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপক কাজ এখনও চলছে। তবে নানা সুযোগ-সুবিধা থাকায় শিল্পনগরী নিয়ে এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ৫৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে বেশ কিছু কোম্পানি সেখানে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৬৭ লাখ ৬৪ হাজার ডলার। বাকিটা স্থানীয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৩৬টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য পাঁচ হাজার একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। যে লক্ষ্য নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পনগরী শুরু হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে রূপ নিতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) তত্ত্বাবধানে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে শিল্প শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অবকাঠামোসহ সব কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের বৃহত্তম শিল্প নগরী বা অর্থনৈতিক অঞ্চল। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী হতে যাচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বড় শিল্পনগরী।
বেজা বলছে, এই শিল্পনগরীতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ প্রয়োজনীয় সব সেবা দ্রুত নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে শিল্পনগরী।
শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক বলেন, সবুজ, পরিকল্পিত ও স্মার্ট শিল্পনগরীতে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। মূলত সমুদ্রবন্দর এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছাকাছি হওয়ায় এর কদর বেশি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিমানবন্দরও কাছাকাছি। কক্সবাজার বিমানবন্দরের সুবিধাও রয়েছে। এসব বিষয় চিন্তা করেই এ শহরের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
বেজার কর্মকর্তারা জানান, এই শিল্পনগরীতে মোট সাড়ে সাত লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এতে একদিকে যেমন বেকারত্ব কমবে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন গতি। শহরটি বিভিন্ন জোনে বিভক্ত। যেখানে হালকা, মাঝারি ও ভারী শিল্প গড়ে উঠছে। পৃথক আবাসিক, প্রশাসনিক, ব্যবসা কেন্দ্র এবং পরিষেবা এলাকা আছে।
বিশ্বব্যাংক, আইএফসি, জাইকা, ইউএনডিপি, এডিবি, ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্সেস গ্রুপ এবং ভারত সরকার চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও সোনাগাজী উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত এই শিল্পনগরীর উন্নয়নে সহায়তা করছে।
কি ব্যবস্থা আছে?
যোগাযোগের সুবিধার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে শিল্পনগরকে যুক্ত করার জন্য তিনটি সংযোগ সড়ক রয়েছে। যাতায়াতের জন্য আলাদা রাস্তা থাকবে। দুই লেনের সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। মাল ও যাত্রী পরিবহনের জন্য রেল ব্যবস্থাও থাকবে। রেলপথ নির্মাণের জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
কারখানা ও আবাসিক বর্জ্য পানি শোধনাগার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিইটিপি স্থাপন করা হচ্ছে। কঠিন শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুনঃব্যবহার এবং পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য খাল উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব করতে ‘সবুজ প্রযুক্তি’ ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এলাকাটি ধীরে ধীরে একটি স্মার্ট শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে উঠছে।
এ শহরে বিদ্যুতের চাহিদা হবে প্রায় ৩২০০ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিডলাইন থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই উৎপাদন শুরু হবে। দেশীয় চাহিদা মেটাতে তিনটি গ্রিড সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। সব শিল্প উৎপাদনে গেলে পানির চাহিদা হবে আনুমানিক এক হাজার এমএলডি। ভূগর্ভস্থ উৎস ও প্রাকৃতিক উপায়ে পানি আহরণ করে পানির চাহিদা মেটানো হবে। এছাড়াও, বেজার নিজস্ব তহবিল ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে’ ব্যবহার করা হবে।
বিনিয়োগকারীদের পণ্য সরবরাহের সুবিধার্থে একাধিক জেটি নির্মাণ করা হবে। এলাকাগুলো আবাসন, পুনর্বাসন, বিনোদন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য সংরক্ষিত। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে নগরীতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করবে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)।
জমি বরাদ্দ এবং বিনিয়োগ পরিস্থিতি
বিশ্বের বিখ্যাত কয়েকটি কোম্পানিও এখানে জমি বরাদ্দ দিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। উল্লেখযোগ্য কিছু হল- জাপানের নিপ্পন, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, আদানি এবং যুক্তরাজ্যের বার্জার পেইন্টস এবং চীনের জুজু জিনুয়ান কেমিক্যাল, সিসিইসিসি, জাইহাং, ম্যারিকো ইত্যাদি।
আড়াই কোটি ডলার বিনিয়োগ করে এরই মধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে এশিয়ান পেইন্টস। ম্যাকডোনাল্ড স্টিল বিল্ডিং প্রোডাক্টস, নিপ্পন এবং ম্যাকডোনাল্ড স্টিলের মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগ, ৬০ মিলিয়ন বিনিয়োগ করে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল তৈরির জন্য একটি কারখানা তৈরি করেছে। তাদের উৎপাদনও শুরু হয়েছে।