বড় শোডাউনের পর ফের তৃণমূলে ফিরেছে বিএনপি।
ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় শহরে বিএনপি ও সমমনাদের মানুষের অবস্থান
সমমনাদের নিয়ে ঢাকাসহ ১০টি সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে একযোগে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজধানীর আটটি স্থানে অবস্থান করে সমমনা গ্রুপ। ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচির এটি দ্বিতীয় ধাপ। তবে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে বড় ধরনের শোডাউনের পর তৃণমূলের কর্মসূচিতে ফিরেছে বিএনপি। বিভাগীয় ব্যাপক গণ সভা-সমাবেশ শেষে আগামী ১৬ জানুয়ারি গণস্থান থেকে সারাদেশে মিছিল-সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত ১০ দফাসহ বিদ্যুতের দাম কমানোর জনসাধারণের ইস্যুতে সারাদেশে জেলা, শহর, থানা-উপজেলা ও পৌর সদরে সমাবেশ ও মিছিল করা হবে। বিএনপিসহ ৫৪টি দল ও সংগঠন এ কর্মসূচি পালন করবে। নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জনগণ ইতোমধ্যে সরকারকে ‘প্রাথমিক বার্তা’ দিয়েছে। এখন তারা ‘চূড়ান্ত বার্তা’ দেওয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষকে আরও সম্পৃক্ত করতে চায়।
গত ১২ অক্টোবর থেকে বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশ, মিছিল ও সর্বশেষ গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এর আগে জুলাই মাস থেকে তারা বিভিন্ন জনসাধারণের ইস্যুতে সারাদেশে জেলা, মহানগর, থানা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। এ কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিভাগীয় পর্যায়ে বড় কর্মসূচি নেয় দলটি।
সদ্য কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় এক জনসভায় বলেছেন, এই সরকার অবৈধভাবে ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে এবং দুইবার ক্ষমতায় থেকেছে। অবৈধ সরকার সম্পূর্ণ দুর্নীতিগ্রস্ত, বিভাজনকারী ও নিপীড়ক সরকার হিসেবে ক্ষমতা দখল করেছে। আওয়ামী লীগ এখন সম্পূর্ণভাবে তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব হারিয়েছে। তারা বলপ্রয়োগ করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পুলিশ ও আমলাদের ওপর নির্ভরশীল।
সমমনাদের মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, পূর্বপ্রান্তে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, আরামবাগের ইডেন কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণফোরাম, বিজয়নগরে পানির ট্যাঙ্ক থেকে ১২ দলীয় জোট, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট। পুরানা পল্টনে এবং কারওয়ান বাজারে এফডিসির কাছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপিও পৃথকভাবে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। . তবে জামায়াত ১-১১ দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করেছে। এদিন ঢাকা মহানগরীতে ঘরোয়া আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি।
নয়াপল্টনে বিএনপির গণজাগরণ কর্মসূচি সফল করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন রঙের টুপি-গেঞ্জি পরে এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে তারা স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলে। সকাল সাড়ে ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি শুরু হলেও দুপুর ১টা পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ঢল চলে। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের ভিড় ফকিরাপুল পেরিয়ে দৈনিক বাংলা মোড় ও অন্যদিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে যায়। পুলিশের শর্ত অনুযায়ী সড়কের একপাশ দখল করার কথা থাকলেও এ সময় সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ জনসভায় ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা অংশ নেন। চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপিপন্থী বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন। অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগে দলীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক ও বিপ্লবী গান পরিবেশন করা হয়।
বিএনপিসহ অন্যান্য দলের এ কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই তৎপর ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ‘ফ্যাসিবাদী, দুর্নীতিবাজ, গণতন্ত্র বঞ্চিত সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং ১০ দফা দাবি এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত সড়কের একপাশে বিএনপি ও দলের সহযোগী সংগঠনের অনুমতি ছিল প্রশাসনের। সে মোতাবেক ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীদের মোট ১৭টি স্থানে আসন নির্ধারণ করেন দলটির নেতারা। আবার এসব জায়গায় নেতাকর্মীদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের আলাদা দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায়। সেটা হতে দেওয়া হবে না। তার জন্য আপনাদের আরও জাগতে হবে। এখন বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এখন সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা উচিত।