সরকারি কর্মকর্তা, দালালদের যোগসাজশে অনিয়ম।কলাপাড়ায় জমি অধিগ্রহণ

0

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প ঘিরে হাজার হাজার মানুষের জমি ও ঘর অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে কয়েক বছর ধরে এই অধিগ্রহণ নিয়ে টালমাটাল রয়েছে। ক্ষতিপূরণ পেতে বিলম্ব ও অনিশ্চয়তার পাশাপাশি দালাল ও এক শ্রেণীর কর্মকর্তার উত্থান রয়েছে। দালালের সহায়তায় জমির প্রকৃত মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ভুয়া মামলায় অনেক জমির মালিকের ভাগ্য আটকে আছে। মেলে না ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন কেন্দ্রে বাসস্থান। অনেক মানুষকে আশ্রয় না দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। অনেককে পুনর্বাসিত করা হলেও তারা তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পের কারণে ইলিশের প্রজননসহ বন্যপ্রাণীর ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

গ্রামের পর গ্রাম অধিগ্রহণ: বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তথ্য বলছে, পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ৬,৫৬২.২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ২০ পরিবার। পুনর্বাসনের তালিকায় এসেছে ৩ হাজার ৪২৩টি পরিবার। প্রায় দেড় হাজার পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এখনও চলছে। পায়রা ১,৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ৯৮২.৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ১৩০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবাই পুনর্বাসনের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু  ঘর এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।

পটুয়াখালীর ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন (আরএনপিএল) নির্মাণাধীন রয়েছে। এই স্টেশনের জন্য ৯১৫.৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ২৮১টি পরিবার। পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ পরিবার। ২৮১টি পরিবারকে পুনর্বাসনের তালিকায় আনা হয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সুপারথার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট (আশুগঞ্জ) নির্মাণের জন্য ৯২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ১৮০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসনের তালিকায় আনা হয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বৃহত্তম নৌঘাঁটি বিএনএস শেরেবাংলা নির্মাণের জন্য ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও ৬২০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এ এলাকায় কত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তথ্য পাওয়া যায়নি।

সবচেয়ে বেশি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কলাপাড়ার লালুয়া ও ধানখালী ইউনিয়নে। এ দুই ইউনিয়নের ২১টি গ্রাম এখন জনবসতিহীন।

তিন চক্রের জাল: জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে কলাপাড়ায় সক্রিয় দালাল চক্র। তারা ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার হাত ধরে কাজ চালাচ্ছেন। এমন ঘটনার সত্যতা পেলেন পটুয়াখালীর নতুন জেলা প্রশাসক মো. শরিফুল ইসলামের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সুধীজন মো. গত ১৩ ডিসেম্বর কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা তুলে ধরা হয়। কারো নাম উল্লেখ না করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনিয়ম ও হয়রানির প্রতিকার চাওয়া হয়। ওই বৈঠকে জানানো হয়, মিথ্যা অভিযোগ ও কাল্পনিক মামলার কারণে অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা সময়মতো ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না।

অনিয়ম-দুর্নীতিতে কারা জড়িত জানতে চাইলে সভায় উপস্থিত একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, প্রতিটি গ্রামে শত শত দালাল কাজ করছে। তারা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। সে অনুযায়ী উত্তরাধিকার দাবি করে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। দালালরা ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে। একই জমির মালিকানা দাবি করে একাধিক ব্যক্তি অধিগ্রহণ শাখায় অনাপত্তি বা আদালতে মামলা দায়েরের পর পুরো প্রক্রিয়াটি স্থবির হয়ে পড়ে। মামলা-মোকদ্দমার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সঠিক মালিকানা চিহ্নিত হওয়ার পরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না।

ধানখালী গাজী সফিউর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কথা হয় সালমা বেগমের সঙ্গে। তার স্বামী মো. গোলাম মাওলা ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তারা ৪০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে তাদের পুরো ১২ কাঠা আবাসন ও কৃষি জমি দিতে হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে পান ১৭ লাখ টাকা। এ জন্য স্থানীয় দালাল আজিজুর রহমানকে দিতে হয়েছে তিন লাখ টাকা। জমি ও বাসস্থান হারিয়ে তারা এখন পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

এখানেই কথা হয় আবুল বাশারের সঙ্গে। তিনি বলেন, অধিগ্রহণের সময় তার ১৬ লাখ টাকার বাড়ির দাম ধরা হয়েছিল ৬ লাখ টাকা। আতাউল্লাহ নামের এক দালালকে কৃষি জমি বরাদ্দের জন্য ১ লাখ ৮ হাজার টাকা তুলতে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে।

বিক্ষুব্ধ জমির মালিকদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখা টাকা ছাড়া কোনো নথি নড়াচড়া করে না। কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রামের হানিফ হাওলাদার অভিযোগ করেন, তিনি বাড়ির ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৯ লাখ টাকা পেয়েছেন। টাকা উত্তোলনের জন্য দালাল ও এলএ অফিস ও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *