হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়েই মায়ের জানাজা পড়ালেন বিএনপি নেতা
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো: আলী আজমের মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন। আলী আজম পাবরিয়াচালা এলাকায় নিজ বাড়িতে পৌঁছে পায়ে হাতকড়া ও ক্রাচ নিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেন। মোঃ আলী আজমের মা সাহেরা বেগম (৬৭) গত রোববার বিকেলে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন।
নিহতের স্বজনরা জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি । গত রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আলী আজমের মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর তাকে শেষবারের মতো দেখতে এবং তার জানাজা ঈমামতি করার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে গতকাল প্যারোলে মুক্তির আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। কিন্তু সোমবারের পরিবর্তে মঙ্গলবার তাকে তিন ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি দেন আদালত। পরে, তিনি প্যারোলে মুক্তি পান এবং হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরা অবস্থায় তার বাড়ির কাছে তার মায়ের জানাজা পড়ান।
জানাযার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও পায়ের শেকল খোলা হয়নি। জানাজায় উপস্থিত লোকজন এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জানাজার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষের মধ্যে তুমুল আলোচনা হয়।
জানাজায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী সৈয়দুল আলম বাবুল, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদসহ উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ বলেন, মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে আলী আজম প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, জানাজার সময়ও তার হাতকড়া ও শেকল খোলা হয়নি।
মৃতের ছোট ছেলে আতাউর রহমান বলেন, “জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলে তিনি প্যারোলে মুক্তি পান। কিন্তু জানাজায় ইমামতি করার সময় পুলিশ তার হাতকড়া অপসারণ করেনি। সম্প্রতি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ বজলুর রশীদ বলেন, ‘আলী আজমকে ৯ পুলিশ সদস্যসহ তার বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং জেল আইন অনুযায়ী তাকে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৯শে নভেম্বর কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোর এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অভিযানের অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। আলী আজম। এ মামলায় আলী আজমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আরো ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুল মান্নান শেখকে বাদী করা হলেও এ সময় তিনি ঘটনা ও মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি বললেন, ‘কসম, আমি সেখানে ছিলাম না। এখানে ছিলেন আলাউদ্দিন এস.আই. ওই স্যার আমাকে বারবার ডেকে অস্থির করে তুলছেন। আমি বলি, স্যার আমি দাওয়াতে আছি। আমি কিভাবে একটি মামলা দায়ের করব? আমি সেখানে ছিলাম না, আমি দেখিওনি । স্যার, আমাকে অযথা ঝামেলায় ফালায়েন না।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সভাপতি শাহজাহান মিয়া বলেন, “বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুতর। শুনেছি তিনি আসামি নন। তাই তাকে সুযোগ দেওয়া যেত। শুধু হাতকড়া পরিয়ে জানাজায় অংশগ্রহণ করা যেত।