নয়াপল্টনে অনড় বিএনপি, পুলিশ বলছে তাদের দাঁড়াতে দেওয়া হবে না
সমাবেশস্থল নিয়ে কয়েকদিন ধরেই সরকার ও বিএনপির মধ্যে মতবিরোধ চলছে। জনসভা কোথায় হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ এখন বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর সমাবেশস্থল নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছার সম্ভাবনা আরও কমেছে। নয়াপল্টনসহ ঢাকার যে কোনো উন্মুক্ত সড়কে জনসমাগম ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি করার কথাও ভাবছে পুলিশ। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পরও নয়াপল্টনে গণসমাবেশে অনড় বিএনপি। ঢাকাভিত্তিক অধিকাংশ নেতাকে গ্রেফতার করলেও দলটির নেতারা সমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর বলে জানা গেছে। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আইন অমান্য করলে বিএনপির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নয়াপল্টনে সমাবেশ করে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা যাবে না। ঢাকার পুলিশ প্রধান বলেন, পল্টনে ১০ লাখ মানুষের বসার জায়গা হবে না। সেখানে সর্বোচ্চ এক লাখ মানুষ দাঁড়াতে পারবেন। বাকি ৯ লাখ মানুষ ছড়িয়ে পড়বে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে। এতে বিএনপির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। পুলিশেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এই ১০ লাখ মানুষ ঢাকার সব রাস্তা দখল করলে তা হবে নগরবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগের বিষয়। ডিএমপি কমিশনার বলেন, সব মিলিয়ে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরে গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারি তারা সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে আগ্রহী নয়। তারা পল্টন বা আশপাশের রাস্তায় সমাবেশ করতে চায়। এ প্রেক্ষাপটে ডিএমপির স্পষ্ট বক্তব্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা অনুরূপ কোনো খোলা মাঠে সমাবেশ করতে হবে। জনদুর্ভোগ ও জননিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমতাবস্থায় কেন ডিএমপি ১৪৪ ধারা জারি করেনি জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, এখনও ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। তারা যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে যান, তাহলে ভালো। অন্যথায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে হামলা চালায়, কেন এমন করা হলো? সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ভিডিও ফুটেজ আপনারা দেখেছেন, আমি এখনো দেখিনি। রাজধানীর প্রবেশপথসহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ তল্লাশির নামে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এমন কোনো তথ্য নেই। ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলছে বিশেষ অভিযান। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন। এর আগে যেকোনো ধরনের নাশকতা রোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে আমরা চেকপোস্ট বসিয়েছি। আমরা কোনো যাত্রীকে ঢাকায় আসতে আটক করিনি বা আটকাইনি। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ধুপখোলা ও রহমতগঞ্জ মাঠকেও সমাবেশস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তবে সে চিন্তা বেশিদূর এগোয়নি কারণ পুরান ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা ও মাঠ খুব একটা বড় না। এ ছাড়া মিরপুরের কালশী মাঠটিও বিবেচনা করা হচ্ছে। শুরু থেকেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। রোববার নয়াপল্টনের বাইরে অন্য কোনো স্থানে সমাবেশ হবে না বলে অবস্থান থেকে সরে আসে বিএনপি। তারা পুলিশের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বিকল্প স্থানের নাম জানতে চান। অনুমতি পেলে আরামবাগ সমাবেশ করতেও রাজি। তবে গতকাল পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি বিএনপিকে। এদিকে সমাবেশস্থল নিয়ে জটিলতা নিরসনের চেষ্টা করছেন ডিএমপি ও বিএনপির প্রতিনিধিরা। তবে বিএনপির প্রতিনিধি দলের একমাত্র সদস্য ও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি গতকাল গ্রেপ্তার হওয়ায় সমঝোতার পথ আরও অবরুদ্ধ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও বিএনপি তাদের ঘোষিত জনসভা কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, যে কোনো মূল্যে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হবে।