চট্টগ্রামের জনসভায় আজ প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দেবেন?
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুল আলোচিত জনসভা আজ চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলো গ্রাউন্ডে। দুপুর ২টা থেকে ঐতিহাসিক পলো গ্রাউন্ডে তার জনসভা শুরু হবে। তাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত চট্টগ্রাম। দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত জনসভা থেকে চট্টলাবাসীসহ সারাদেশের মানুষের কাছে ভোট চাইবেন প্রধানমন্ত্রী; নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। এসব কারণে পলো গ্রাউন্ডে জনসভা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি মাসেই কর্ণফুলীর নিচ দিয়ে দেশের প্রথম টানেলের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। জানুয়ারিতে টানেল নির্মাণের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে পলো গ্রাউন্ডের জনসভা থেকে কোনো মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হচ্ছে না। তবে তিনি ৩০টি ছোট-বড় উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
জনসভাকে ঘিরে গোটা বন্দর নগরী মুখরিত। গতকাল রাত পর্যন্ত বিরামহীন প্রচারণা চলে। ব্যানার-পোস্টার ও তোরণে ভরে গেছে নগরী, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় যাওয়ার জন্য যেসব সড়ক ব্যবহার করবেন, সেখানে ব্যানার-পোস্টার লাগানোর জায়গা নেই। ইতিমধ্যেই নৌকার আদলে জনসভার জন্য সুন্দর মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ৩ হাজার ৫২০ বর্গফুটের এই মঞ্চে প্রায় ২০০ জন বসতে পারবেন। তবে যারা মঞ্চে বসার সুযোগ পাবেন, তাদের দেখাতে হবে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট। জনসভাকে সামনে রেখে শনিবার থেকে পুরো নগরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ টহল দিচ্ছে। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ, গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। নিরাপত্তার জন্য আর্চওয়ে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ড্রোনসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, পুরো শহরকে নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর ৯ মাস পর নগরীতে জনসভায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে এ জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ পলো গ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট আয়োজিত মহাসমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
যে ঘোষণাগুলো হতে পারে: নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে যেহেতু জনসভার আয়োজন করা হয়েছে, সেই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী ঘোষণা বা নির্দেশনা দেন তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অবশ্য বলেন, যেহেতু জনগণের রায়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে, তাই জনগণের সামনে আসা আমাদের দায়িত্ব। দেশ আগে কোথায় ছিল, এখন কোথায় আছে, জনগণের জন্য আমরা কী করেছি, দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চাই- এগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা জনগণের দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জনগণের নেত্রী, সে কথাগুলো তিনি জনগণের কাছে পৌঁছে দেবেন। আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আরও জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত জনসভা থেকে দলের নেতা-কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
নগরীর খারাপ ভাবমূর্তি আড়াল: কোনো এলাকা সফরে গেলে ওই এলাকার দরিদ্র, জরাজীর্ণ অবস্থা দেখার সুযোগ পান না প্রধানমন্ত্রী। কারণ তিনি যে পথ দিয়ে যাতায়াত করেন, রাতারাতি বদলে যায় সেসব পথের করুণ চিত্র। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। খানাখন্দে ভরা সড়কে নতুন পাথর-বিটুমিনের আবরণ পড়ে গেছে। রাস্তার পাশের ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। রঙহীন ফ্লাইওভারে রঙের ছোঁয়া।
প্রধানমন্ত্রীর দিনব্যাপী কর্মসূচি: সকালে ভাটিয়ারীতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে এক সামরিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড-২০২২ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। দুপুরে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে আসবেন। স্টেডিয়াম থেকে গাড়িতে করে পলো গ্রাউন্ডে সমাবেশে যোগ দেবেন। তিনি জনসভা থেকে বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন ও জনসভায় বক্তব্য দেবেন।