নতুন বছরের শুরুতেই খুলে যাচ্ছে স্বপ্নের টানেল
কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত বাংলাদেশের একমাত্র টানেলের কাজ শিগগিরই চালু হচ্ছে। নদীর তলদেশ থেকে ১৮-৩৬ মিটার গভীরে দুটি টানেল তৈরি করা হয়েছে। ২.৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল বরাবর দুটি টিউব রয়েছে। এ দুটি নলজুড়ে চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতে নদীর তলদেশে এ সড়ক দিয়ে গাড়ি চলবে।
এর আগেই শেষ হচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণের মূল কাজ। টানেলের দক্ষিণ টিউব নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এই নল দিয়ে আনোয়ারা থেকে শহরমুখী যানবাহন আসবে। উত্তর টিউবের কাজও প্রায় শেষের দিকে। আনোয়ারাগামী যানবাহন শহর থেকে নর্থ টিউব দিয়ে চলাচল করবে। এই টিউবটিও ৯৯ শতাংশ সম্পূর্ণ। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করে নতুন বছরের শুরুতেই খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের এই টানেল।
পুরো প্রকল্পের কাজ ৯৪ শতাংশ শেষ হলেও নির্মাণ কাজ শেষ। সাফল্যের এই মুহূর্তটিকে স্মরণে রাখতে উদ্যোগী হয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার, তারা টানেলের ‘সাউথ টিউব কমপ্লিশন সেলিব্রেশন’ করবেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। দেশের প্রথম এই টানেলের নামকরণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে।
টানেলের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তীরে টানেল তৈরির কাজটি খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। তা সত্ত্বেও আমরা পরিকাঠামো নির্মাণের মূল কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছি।
টানেলিং, রাস্তা নির্মাণ, লিঙ্ক বিল্ডিংয়ের প্রকৌশলের কাজ শেষ হয়েছে। টানেলের ভেতরে বিকল্প পথ তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। এখন পুরোদমে চলছে সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ। বাতি স্থাপন, পাম্প স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণের কাজও একই গতিতে চলছে। প্রকল্প পরিচালক জানান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল এই তিন ধরনের কাজ টানেলের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই তিন ধাপের কাজ শেষ হলেই ট্রায়াল ট্রাফিক শুরুর ঘোষণা দেবে কর্তৃপক্ষ।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জরিপ অনুযায়ী বছরে প্রায় ৬৩ লাখ যানবাহন টানেল দিয়ে যাতায়াত করবে। তিন বছর অপারেশনের পর সেই সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৬ লাখে। আপাতত প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার ৫০০ গাড়ি চলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যে দিয়ে নদীর তলদেশ দিয়ে সুড়ঙ্গটি চলে গেছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চলমান মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিমি। তবে সংযোগ সড়কসহ টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ৯.৩৯ কিলোমিটার। নদীর তলদেশে ১০.৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউব টানেল করা হয়েছে। সুড়ঙ্গটিতে দুটি টিউব থাকলেও তিনটি সংযোগকারী প্যাসেজ রয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি তৃতীয়টির কাজও শেষ হয়েছে। এটি একটি ক্রস প্যাসেজ বা বিকল্প পথ হিসাবে প্রথম দুটির সাথে সংযুক্ত। প্রধান দুটি রুট কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হলে তৃতীয় রুট ব্যবহার করা হবে।
চীনের সাংহাইয়ের আদলে নির্মিত হবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের সেই শহরের মতো একটি শহর চট্টগ্রামে থাকবে। তবে নদীর দুই ধারে থাকবে দুটি জনপদ। এই অর্থ মাথায় রেখে টানেলের স্লোগান হল ‘এক শহর থেকে শহরে’। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে রয়েছে ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। আর আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার।
১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা ঋণ দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশকে এই অর্থ ডলারে পরিশোধ করতে হবে ২ শতাংশ সুদে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে টানেল নির্মাণের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটি আগামী ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কার্যত সময়সূচি অনুযায়ী কাজ শেষ হয়।