কেউ নির্বাচনে না এলেও সংবিধান  বসে থাকবে না

0

আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চায় সব দল নির্বাচনে আসুক। কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে সেটা দলের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এর জন্য সংবিধান বন্ধ রাখতে পারি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় কোন দল কোন জোটে থাকবে তা সময়ই বলে দেবে। দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে জনগণ আবারো আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

বুধবার গণভবনে সদ্য সমাপ্ত ভারত সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সাম্প্রতিক ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেল বা পেল না তা আপেক্ষিক বিষয়। তবে খালি হাতে ফেরেনি বাংলাদেশ। যারা এই সফরের সমালোচনা করছেন, তারা ভারত থেকে কী নিয়ে এসেছেন- সেটাই প্রশ্ন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গত ৫ সেপ্টেম্বর চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সফরে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনসহ সাতটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। সফর শেষে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।

এই সফরের বিস্তারিত ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন ছাড়াও দেশের সমসাময়িক রাজনীতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন, রোহিঙ্গা সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটির সমসাময়িক রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন তুলেছেন। করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। এসব প্রশ্নের খোলাখুলি উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি শেখ হাসিনা মাঝে মাঝে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাস্যরসে লিপ্ত হন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন পত্রিকা, টিভি চ্যানেলের সম্পাদক ও ব্যবস্থাপক ছাড়াও সিনিয়র সাংবাদিক, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আমি চাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আর যদি কেউ না করে, এটা তাদের দলের সিদ্ধান্ত। সেজন্য আমরা আমাদের সংবিধান বন্ধ রাখতে পারি না। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক।

আগামী নির্বাচনে ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ আলাদাভাবে অংশ নেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচনে এলেই এ বিষয়ে বলতে পারব। আমরা ১৪ দল করেছি, জোটগতভাবে নির্বাচন করেছি। জাতীয় পার্টি আমাদের সঙ্গে ছিল। তবে আমরা আলাদাভাবে নির্বাচন করলেও আমাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে কে কোথায় থাকবে তা সময়ই বলে দেবে। আওয়ামী লীগ উদারভাবে কাজ করে। আওয়ামী লীগের দরজা খোলা। আর কে আমাদের সঙ্গে থাকবে না বা নতুন জোট হবে, তাতে কোনো সমস্যা নেই!

আওয়ামী লীগ সরকারের অতীতের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এত কাজ করার পর জনগণ অবশ্যই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে-এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে চাইলে জনগণ ভোট দেবে। আর আপনি যদি না চান তবে আপনাকে কিছু করতে হবে না – এটি জনগণের ইচ্ছা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেকোনো নির্বাচনে মনোনয়ন পরিবর্তন হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ অবশ্যই যাচাই করবে কার জয়ের সুযোগ আছে আর কার নেই। নির্বাচনের এখনও এক বছর বাকি, সময় যত যাবে ততই পরিষ্কার হবে।

ভারত থেকে খালি হাতে ফিরে আসিনি

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর থেকে বাংলাদেশ কী পেল- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কী পেলাম সেই প্রশ্নটা খুবই আপেক্ষিক। এটা আপনার উপর নির্ভর করে, আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন। তবে খালি হাতে ফিরে এসেছি বলে মনে হয় না।

এই সফরে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনসহ আরও সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ভারত থেকে এলএনজি আমদানির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারত যে এলএনজি আনছে তা থেকে খুলনা অঞ্চলের জন্য এলএনজি পেতে আলোচনা হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সফরে তিনি ভারতের কাছ থেকে যথেষ্ট আন্তরিকতা পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী, ভারতের রাষ্ট্রপতি বা অন্য যে কারো সাথে তারা কথা বলেছেন তাদের আন্তরিকতা সবসময় ছিল এবং আছে। একটা কথা, ভারতের সব দল বাংলাদেশের ব্যাপারে একমত- এটা একটা বড় কথা।

আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুবই পরিষ্কার। সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ নীতি অনুসরণ করে আসছে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আমাদের সব সমস্যার সমাধান করছি। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

যারা অন্যায় করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

বিএনপির আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনে জনগণ সাড়া না দিলে তার দায় আমার নয়। আওয়ামী লীগ কি বিএনপির হাতে নির্যাতিত হয়েছে? সবাই আওয়ামী লীগকে আক্রমণ করেছে। আমরা মৃতদেহ টেনে নিয়ে আহতদের চিকিৎসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। সেই পরিবেশ কি আজ বিদ্যমান? এর অস্তিত্ব নেই। আমাদের দলের কেউ ভুল করলে আমরা হাল ছাড়ি না। আমার দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, তাই বলে কিছু বলব না? এইটা না. যারা অন্যায় করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব এবং নিচ্ছি।

বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *