রপ্তানি ও রেমিট্যান্স হারে বড় ব্যবধান নতুন সংকট।ডলার বাজার

0

রপ্তানি ও রেমিটেন্সের জন্য সর্বোচ্চ ডলারের হার নির্ধারণে ৯ টাকার ব্যবধান রাখা হয়েছে। ফলে যে ব্যাংকের মাধ্যমে বেশি রপ্তানি আয় নগদীকরণ হবে, সেখানে আমদানি পর্যায়ে ডলারের হার তুলনামূলক কম। আর যা নির্ভর করে ব্যাংক রেমিট্যান্সের ওপর, সেগুলোর মাধ্যমে আমদানি করতে ডলারের দাম বেশি পড়ছে। এই বড় ব্যবধানের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমদানিকারকরা বেশি রপ্তানি আয়ের ব্যাংকে যাবেন। যারা পিছিয়ে আছে তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চলমান সংকট উত্তরণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও ফল পাচ্ছে না। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশে ডলার কেনার সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্সের জন্য সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা এবং রপ্তানি বিল নগদকরণের জন্য ৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর রপ্তানি বিল অর্থায়ন ও রেমিট্যান্সের গড় হারে ১ টাকা যোগ করে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করবে ব্যাংক। যদি একটি ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে, তবে রপ্তানি বিল এবং রেমিটেন্সের প্রস্তাবিত গড় হারের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ পয়সা বেশি চার্জ করবে।

জানা গেছে, ডলারের দামের ব্যাপক পার্থক্য থাকায় বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। একই হারে পণ্য আমদানি করা হলেও শুধুমাত্র ব্যাংক ভিন্ন হওয়ায় আমদানিকারকের খরচের বড় তারতম্য রয়েছে। এই ব্যবধানের ফলে বাজারে পণ্যের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলারের হারের এমন পার্থক্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কিছু একটা করা দরকার ছিল, তাই করা হল। টেকসই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রেমিট্যান্সের হার কমাতে হবে, রপ্তানির হার বাড়াতে হবে। উভয়ের দাম ১০৪ থেকে ১০৫ টাকার মধ্যে আনতে হবে। এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে রেমিট্যান্সের হার কমানো বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহে প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ বলেন, যারা হুন্ডি করেন তারা তা করবেন। দাম তাদের জন্য কোন সমস্যা নয়। ডলার সংকটের কারণে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো পাচ্ছে। যদি সব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ দিনের জন্য ডলার না কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে রেট কমবে।

ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক গতকাল আমদানি ঋণ মেটাতে ডলারপ্রতি ১০৭ টাকা ৪৫ পয়সা নিয়েছে। কিন্তু অগ্রণী ব্যাংক নিয়েছে ১০৫ টাকা ৪০ পয়সা। আবার বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংক নিয়েছে ১০১ টাকা ৩৭ পয়সা। সিটি ব্যাংকে যেখানে আমদানি ঋণ নিষ্পত্তির জন্য প্রতি ডলারের দাম ধরা হয়েছে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা, সেখানে প্রাইম ব্যাংক নিয়েছে ১০২ টাকা ৪১ পয়সা। ইউসিবিএল রেট ছিল ১০৫ টাকা ৭৫ পয়সা। ইস্টার্ন ব্যাংক ১০৩ টাকা নিলেও ঢাকা ব্যাংক নিয়েছে ১০৫ টাকা ৭৮ পয়সা। ব্যাংক ডলার কেনার গড় খরচের উপর ভিত্তি করে এই হার নির্ধারণ করা হয়। গড় হারের ভিত্তিতে ডলার আন্তঃব্যাঙ্কে লেনদেন হয়। গতকাল আন্তঃব্যাংকে সর্বনিম্ন ১০২ টাকা ৩৭ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৬ টাকা দরে।

সাধারণত, ব্যাংকগুলি ভিন্ন হলেও, পণ্য আমদানির দায় প্রায় একই হারে নিষ্পত্তি করা হয়। কখনও কখনও ব্যাংকগুলির মধ্যে ডলারের হারের পার্থক্য ছিল। এখন রপ্তানি ও রেমিটেন্সের ডলারের হারের বড় পার্থক্যের কারণে তা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। নতুন ব্যবস্থার কারণে পণ্য আমদানিতে ভিন্ন দর থাকবে। বিশেষ করে, উচ্চ রপ্তানি আয়ের ব্যাংকগুলির ডলার প্রতি হার উচ্চ রেমিটেন্সের ব্যাংকগুলির তুলনায় অনেক বেশি। আবার আন্তঃব্যাংক থেকে ক্রয় করে চাহিদা মেটাতে অনেক ফাঁক থাকবে। এসব কারণে রপ্তানি ও রেমিটেন্সের ডলারের হার কাছাকাছি রাখা উচিত বলে মনে করেন অনেক ব্যাংকার।

রিজার্ভ থেকে ৪ কোটি ডলার বিক্রি: গতকাল কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৪ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত মোট বিক্রি ২৯১ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রির ফলে গত বৃহস্পতিবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গত বছরের আগস্টে যেখানে রিজার্ভ বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *