জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ হবে জাপানের ঋণে
জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণের কাজ হবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকার) ঋণে, কারণ চীন খরচ কমিয়ে কাজ করতে নারাজ। গত জুনে জাইকা প্রকল্পের জরিপ হালনাগাদ করা শুরু করে। আগামী মাসে রিপোর্ট দেবে।
আজ সোমবার রেলওয়ে সচিব ড. হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে জাইকার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংগঠনের হেড অব মিশন হিরোশি ইয়োশিদাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। রেলওয়ে সূত্র জানায়, আজকের বৈঠকে প্রকল্প জরিপ হালনাগাদ প্রক্রিয়ার তথ্য ও অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। গত বছরের অক্টোবরে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল জাইকা।
জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথটি ২২ বিলিয়ন ডলার (জেটিইউজি) ঋণ প্রদানের জন্য অক্টোবর ২০১৬ সালে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় স্বাক্ষরিত ২৭টি প্রকল্পের একটি। ২০১৮ সালের নভেম্বরে অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ২৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এতে চীনের ৮ হাজার ৭৫৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল।
জেটিইউজেড ঋণের শর্তানুযায়ী চীনা কোম্পানি চুক্তির কাজ দিতে বাধ্য ছিল। দেশটির চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিইসিসি) এ কাজ পেয়েছে। খোলা দরপত্র না থাকায় আলোচনার মাধ্যমে খরচ নির্ধারণ করা হয়।
ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০১৯ সালে ঠিকাদারের সাথে ১১.৫৮৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার চুক্তি অনুমোদন করেছে। এই অর্থের মধ্যে ১৬২ কিলোমিটার মেইন লাইন সহ ১৯৮ কিলোমিটার রেলপথের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রতি কিলোমিটারে খরচ দাঁড়ায় ৫৯ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত সমজাতীয় রেললাইন নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয় ১৯ কোটি টাকা।
অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়টি আলোচনায় এলে পরিকল্পনা কমিশন কমিটি ব্যয় কমানোর সুপারিশ করে ১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। এতে আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি প্রকল্পে ৪ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা কমানোর নির্দেশ দেন। চীনের জেটুজি ঋণে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর রেললাইনের সমান্তরালে ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় কমানোর কথাও বলেন সরকারপ্রধান।
জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ প্রকল্পে ১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার কম টাকায় কাজ করতে রাজি হয়নি চীনা ঠিকাদার। চীন তিনটি রেল প্রকল্প থেকে সরে গেলে সরকার বিকল্প অর্থায়নের খোঁজ করবে। রেলওয়ে সচিব ড. হুমায়ুন কবির বলেন, জাইকার প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথে অর্থায়নে সম্মত হয়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ব্যয় বাড়ার কারণে চীনকে বরখাস্ত করা হলেও প্রকল্প ব্যয় কয়েক বছর পিছিয়ে যাবে। জাইকার কাছ থেকে ১০৩ মিলিয়ন ডলার ঋণের অনুরোধ করা হয়েছে। ডলার, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে, প্রকল্পের ব্যয় অবশ্যই পূর্বের আনুমানিক ব্যয়কে ছাড়িয়ে যাবে। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, জাইকা প্রকল্পটি দুটি অংশে বাস্তবায়ন করতে চায়- জয়দেপুর থেকে যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত ৮৫.৫২ কিলোমিটার এবং ঈশ্বরদী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত ৭৯.৫ কিলোমিটার। এলেঙ্গায় একটি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে। সাতটি স্টেশন পুনর্গঠন করা হবে এবং ১৪টি স্টেশন দুটি অংশে সংস্কার করা হবে। ৬৬টি বড় ও ১৩৮টি ছোট সেতু নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জেলায় ১০৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ইতিমধ্যে নাটোরে জমির মালিকদের ৭ ধারায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যার পুরোটাই সরকার দিয়েছে।