ছেলে হত্যার বিচার কি আমি দেখে যেতে পারব না।পুলিশের হাতে নিহত জনির মায়ের আকুতি
‘আমার নিরপরাধ ছেলেকে যেভাবে মেরেছে তা ভাবলে আমি এখনও কাঁদি। আমি আমার ছেলেকে ফিরে পাচ্ছি না, এখন একটাই চাই- দোষীদের শাস্তি হোক। আমি বছরের পর বছর ধরে এটির জন্য অপেক্ষা করছি। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত ছেলেটির হত্যা দেখতে পাচ্ছি না?’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর পল্লবীতে পুলিশের গুলিতে নিহত ইশতিয়াক হোসেন জনির মা খুরসিদা বেগম।
সাড়ে আট বছর আগে ওই ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু প্রতিরোধ আইনে প্রথম মামলা হয়। ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলার রায় দেন। পল্লবী থানার তৎকালীন এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল হাসান ও কামরুজ্জামান মিন্টু এবং দুই সোর্স সুমন ও রাসেলকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও, প্রত্যেক দোষী সাব্যস্ত পুলিশ অফিসারকে নির্যাতিতার পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে এএসআই মিন্টু এখনও পলাতক, বাকি চারজন কারাগারে।
এদিকে রায়ের পর আপিল করেন তিন আসামি। প্রায় দুই বছরেও সেই আপিলের শুনানি হয়নি। নিহতের পরিবার হতাশ। জনির ছোট ভাইয়ের মামলার বাদী ইমতিয়াজ হোসেন রকি বলেন, ‘ভাই হত্যার বিচার পেতে লড়াই করে আমি ক্লান্ত ও হতাশ। দুই বছর আগে রুল জারি করা হলেও আপিলের পর তা স্থগিত হয়ে যায়। এতদিন মা আমাকে ন্যায়ের জন্য লড়াই করার সাহস দিয়েছেন। কিন্তু এখন মা বলে- ছাড় বাবা, এটা খুব বেশি। একটা ছেলে চলে গেছে, তোমার কিছু হলে কি হবে?’ এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। ব্লাস্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, রায়ে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়ায় প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। জরিমানার জন্য অপেক্ষা না করে, সরকারের উচিত এই ধরনের ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। রাষ্ট্রপক্ষ যদি বলে যে দ্রুত শুনানি প্রয়োজন, আদালত অবশ্যই তা বিবেচনায় নেবে।
গাড়িচালক জনি এবং তার ভাই রকিকে 8 ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে পল্লবী সেকশন ১১-এর ইরানি ক্যাম্পে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের পল্লবী থানায় নিয়ে গিয়ে গুরুতর মারধর করা হয়। এতে জনি মারা যায়। ওই বছরের ৭ আগস্ট হেফাজতে মৃত্যু (প্রতিরোধ) আইনে মামলা করেন রকি। বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা এ মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
ব্লাস্টের আরেক আইনজীবী বদিউজ্জামান তপাদার বলেন, আপিল শুনানির জন্য পেপার বুক এখনো প্রস্তুত হয়নি। আপিলকারীরা (অভিযুক্ত) বিচার করলে এতক্ষণে কাগজের বই তৈরি হয়ে যেত। কিন্তু তারা জানে এ মামলায় খালাস পাওয়া কঠিন। এ কারণে তারা আগ্রহী নয়।
এদিকে দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পুলিশের এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু বিদেশে পালিয়ে গেছেন। রায়ের তিন মাস পর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ছবিতে তাকে সিঙ্গাপুরের মেরিলিয়ন মনুমেন্ট এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।