সড়কে মৃত্যু।আসছি’ বলে আর আসা হলো না চবি শিক্ষকের

0

প্রিয় বাগানে পাখির কিচিরমিচির। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের গাছ। কয়েক ঘণ্টা আগে বাগানের সামনে দিয়ে হেঁটে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক আফতাব হোসেন। তাকে আর তার প্রিয় বাগানে গাছের যত্ন নিতে দেখা যাবে না। শুক্রবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। মা, স্ত্রী ও ৮ বছরের শিশু, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শিক্ষক আফতাবের সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তাই তার মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারে না। তাকে হারানোর শোক যেন বইছে পুরো ক্যাম্পাসের বাতাসে।

আফতাব হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০১১ সালে একই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ২০১০ সালে ওই বিভাগের শিক্ষিকা ইসমত আরার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের মেহরাব হোসেন নামে ৮ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।

ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে ভালোবাসতেন। সে প্রায়ই তার বন্ধু ইকবাল হোসেনের বাসায় যেত। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইকবাল বলেন, আফতাব প্রায়ই ছেলেকে নিয়ে আসে। ছেলেরা খেলত, আমরা কথা বলতাম। সব সময় ছেলেকে আগলে রাখতেন।

শিক্ষক আফতাবের শ্যালক বলেন, তার শ্যালক খুবই মেধাবী। সন্ধ্যার পর বালুচরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। দুর্ঘটনার ১০ মিনিট আগে তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বললেন, আমি ১০ মিনিটের মধ্যে আসছি। শিক্ষক আফতাব আর আসেননি। স্ত্রী ইসমত আরাকে সীমাহীন প্রতীক্ষায় ফেলে অনন্তের পথে যাত্রা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন শিক্ষক আফতাব। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেলে ইউ-টার্ন করার সময় সামনে থেকে আসা একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনি গুরুতর আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী মোরশেদ জানান, স্যারের মোটরসাইকেল ঘুরানোর সময় শহর থেকে আসা একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে স্যার জ্ঞান হারান। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকের ভাষ্যমতে ঘটনাস্থলেই শিক্ষক আফতাবের মৃত্যু হয়।

রাউজান থানার ওসি কামরুল আজম বলেন, ইউ-টার্ন নেওয়ার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে আমার ধারণা। হাটহাজারী থেকে আসছিলেন শিক্ষক আফতাব। যে গাড়িটি ধাক্কা দিয়েছে সেটি শহর থেকে আসছিল। চালককে আটক করা হয়েছে।

তার মৃত্যুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার বাড়িতে গিয়ে দেখেন স্বজনদের কান্না। ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না বৃদ্ধা মা। স্ত্রী ইসমত আরা খুব ভেঙে পড়েছেন। বাবার বানানো বাগানের সামনে খেলছে ছোট্ট মেহরাব। সে জানে না, তার বাবা আর কোনদিন ফিরে আসবে না! তার সাথে বের হবেন না!

চবির এক নম্বর গেটে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চবি শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছে। সেখানে তিন বছরে চারটি পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ জন। গত বছরের ২০ অক্টোবর বাসচাপায় দুই শ্রমিক নিহত হন। এক নম্বর গেট এলাকায় জেব্রা ক্রসিং ও ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দমে যায়নি কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষক আফতাবের মৃত্যুর ১০ ঘণ্টার মধ্যে নির্মাণ করা হয় স্পিড ব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল আলমের তত্ত্বাবধানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হয়। সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে এসব কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। খুব শিগগিরই ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজও শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া জানান, ফুট ওভারব্রিজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সড়ক বিভাগে আবেদন করা হয়েছিল। বাজেট পাসের পর কাজ শুরু হবে বলে জানান তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *