২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮ বছর।ভয়াল সে দিন আজ
ভয়াল ২১ আগস্ট আজ। স্মৃতির জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার আঠারোতম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নৃশংস গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন প্রায় তিন শতাধিক মানুষ।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বার্তায় তারা ২১ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
২১ আগস্ট, ২০০৪ শনিবার ছিল। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ডাকা সমাবেশ শেষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিল করার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ওই মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সমাবেশে অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শেষে শেখ হাসিনা বক্তব্য শুরু করেন। সময় ছিল ৫:২২ PM। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা হাতে কাগজের টুকরো ভাঁজ করে ট্রাক থেকে নামার জন্য সিঁড়ির দিকে এগোতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরিত হতে থাকে। মুহূর্তেই মৃতুপুরীতে পরিণত হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড হামলার আতঙ্কে সমাবেশস্থল রক্তমাংসের স্তূপে পরিণত হয়। পুরো এলাকা জুড়ে রক্তের স্রোত। অন্ধকার পথ রক্তে লাল হয়ে যায়।
তবে দলের নেতাকর্মী ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগে প্রাণে বেঁচে যান এই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার প্রধান টার্গেট শেখ হাসিনা। মৃত্যুর জাল ভেঙে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। তার সহানুভূতিশীলরা মানব বর্ম তৈরি করে প্রাণ বাঁচান এবং প্রিয় নেতাকে গাড়িতে তুলে দেন। যাইহোক, বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার শেষ চেষ্টা হিসাবে, দলটি তার গাড়িতে ১১টি গুলি চালায়। সৌভাগ্যক্রমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গুলি থেকে বেঁচে যান।
সেদিন এই গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন তাজা প্রাণ হারায়। এসময় আওয়ামী লীগ সভাপতিকে আড়াল করে গুলিবিদ্ধ হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে ঘটনাস্থলেই তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশিদ মারা যান। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে ছিন্নভিন্ন আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান ২৪ আগস্ট মারা যান। এছাড়াও নিহত হন আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), ঢাকা মহানগর মহিলা ওয়ার্ড ৫৮ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুফিয়া বেগম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুফিয়া বেগম। ১৫ নং মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা মমতাজ রীনা, মহিলা মো. আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিয়া বেগম, জাতীয় শ্রমিক লীগ কর্মী নাসির উদ্দিন সরদার, ৩০ নং ওয়ার্ড রিকশা শ্রমিক লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হানিফ, ৬৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেন, যুবলীগ বালুঘাট শাখার সভাপতি ও ক্যান্টনমেন্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, হোসেনপুর ইউনিয়ন মো. যুবলীগের সভাপতি লিটন মুন্সী লিটু, ৮৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা আতিক সরকার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আব্দুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কর্মী ও রি-রোলিং মিল ব্যবসায়ী রতন সিকদার, ছাত্রলীগ কর্মী ও সরকারি কবি মামুন মৃধা, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। নজরুল কলেজ, জামালপুর আওয়ামী লীগের মো. কর্মী আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী ইসহাক মিয়া, মোঃ শামসুদ্দিন, মমিন আলী, আবুল কাসেম ও জাহেদ আলী। এ ছাড়া আরও দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে গ্রেনেড হামলার সময় শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানব ঢাল তৈরি করা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের মাথায় অসংখ্য স্প্লিন্টারের আঘাত লেগেছে। প্রায় আড়াই বছর বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের পর ২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি মারা যান। গত কয়েক বছরে এই গ্রেনেড হামলায় আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং মারা গেছেন।
করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে দিবসটি পালিত হলেও এবার করোনা সংকট কেটে যাওয়ায় নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আজ সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদিতে আওয়ামী লীগ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে এবং সকাল সাড়ে ১০টায় আলোচনা সভা করবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভিডিওর মাধ্যমে আলোচনা সভায় অংশ নেবেন। গণভবন থেকে সম্মেলন। দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও নানা কর্মসূচির আয়োজন করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের গ্রেনেড হামলার দাবী পালনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।