মুন্সীগঞ্জ।’রেডিমেড’ ঘরের হাট

0

পরিবারের চাল-ডাল, তেল-লবণ প্রয়োজন, তারা বাজারে গিয়ে কিনে আনছেন। আমার জামাকাপড় দরকার, দোকানে মিলছে। কিন্তু বাজার থেকে পুরো বাড়ি কেনা যাবে! আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, মুন্সীগঞ্জের সদর, টঙ্গীবাড়ী, লৌহজং, সিরাজদিখান উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে ‘রেডিমেড’ হাউজ মার্কেট গড়ে উঠেছে। নব্বই দশক থেকে এ বাজারে হাউস বিকিকিনি জমে উঠেছে।

মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতে গিয়ে দেখবেন অনেক চকচকে ‘রেডিমেড’ নতুন বাড়ি একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। ক্রেতাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন কারুকার্য ও উন্নতমানের টিন ও কাঠ দিয়ে তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এটি মুন্সীগঞ্জের পাশাপাশি বিক্রমপুরের ঐতিহ্য।

নদীভাঙনসহ মুন্সীগঞ্জের আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঘর নির্মাণ করা। সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের চুদাইন গ্রামে এমনই এক বাজারে কথা বলেন মিস্ত্রী সনৎ চন্দ্র বালা। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের কলি গ্রামের এই বাসিন্দা ১৭ বছর ধরে চুরাইন গ্রামে বাড়ি তৈরি করছেন। আরও ১১ জন রাজমিস্ত্রি রয়েছে। তারা বিভিন্ন কারুকাজ সম্বলিত ৯টি বাড়ি বিক্রির জন্য রেখেছেন। প্রতিটি ঘরই চৌচালা।

মান অনুযায়ী প্রতিটির দাম ভিন্ন। ভিটায় চা-রঙা টিনের ঘর চাওয়া হচ্ছে পাঁচ লাখ টাকা। সনৎ চন্দ্র বালা বলেন, সাড়ে চার লাখ টাকার নিচে বাড়ি বিক্রি হবে না। আরেক রাজমিস্ত্রি অজিত মণ্ডল জানান, আড়াই লাখ টাকার নিচে কোনো বাড়ি নেই। সুমন শেখ, ফিরোজ তালুকদার, আউয়াল শেখ, ইসলাম মিয়াসহ চুরাইন গ্রামের অন্তত ৩০ জন ব্যবসায়ী ‘রেডিমেড’ বাড়ি বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মানুষের সমস্যা পর্যবেক্ষণ করে মুন্সীগঞ্জ সদরের ধলাগাঁও বাজারের আবদুর রহমান প্রথম টিনের তৈরি ঘর তৈরি করেন। ৯ বছর সৌদি আরবে প্রবাসী থাকার পর তিনি এই ব্যবসায় যোগ দেন। তারপর থেকে ২৫ বছর কেটে গেছে। আব্দুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সদর, টঙ্গীবাড়ী, লৌহজং, সিরাজদিখানসহ বিভিন্ন স্থানে ‘রেডিমেড’ বাড়িগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে এক সময় কাঠের টুকরো দিয়ে তালি দিয়ে তৈরি হতো এসব ঘর। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই তা ধ্বংস হয়ে যেত।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখন দিন বদলেছে। ক্রেতারা আধা-বিচ্ছিন্ন বাড়ি কিনতে চান না। এর জন্য ভালো কাঠ ব্যবহার করতে হয়। টিনের ও কাঠের ঘরের মায়া ছাড়তে পারেনি এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ। এ কারণে ঘরের ওপর ইট বসালেও তার ওপর ‘রেডিমেড’ বাড়ি বসিয়ে দিচ্ছেন তারা। এছাড়া নদীভাঙনের কারণে কংক্রিটের ভবনের চেয়ে টিনের কাঠের ঘর মানুষের কাছে বেশি মূল্যবান।

অজিত মন্ডল বলেন, উন্নতমানের নাইজেরিয়া, লোহাসহ বিভিন্ন ধরনের কাঠ দিয়ে বাড়ি তৈরি করা হয়। ক্রেতারা বাড়ি কেনার পর কিছু অংশ নিয়ে যায়। এরপর ইটের ওপর খুঁটি পুঁতে দিলেই বাড়িটি বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *