এ বার প্রকল্পের খরচে লাগাম
প্রকল্পের ব্যয় কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর জন্য প্রকল্পগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ‘ক’ ক্যাটাগরির প্রকল্পে পুরো টাকা খরচ করা যাবে। ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করতে পারে। আর ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে জ্বালানি খরচ কমাতে মন্ত্রীদের গাড়ি নিয়ে ঘোরাফেরা না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার রূপরেখা তুলে ধরেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো গুরুত্ব অনুযায়ী প্রকল্পগুলোকে ‘এ’ ‘বি ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে শ্রেণীবদ্ধ করবে। ধরা যাক, একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কাজের আদেশ দেওয়া হয়নি। এই ধরনের প্রকল্পগুলি ‘সি’ ক্যাটাগরির অধীনে যাবে। আর যেসব প্রকল্পের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন না হলে স্থগিত থাকবে। আবার ঠিকাদার বিল চাইবে। এ জন্য ক্যাটাগরি নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিজেই। এটি গুরুত্বের ক্রমানুসারে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কেউ যদি মনে করে কোনো প্রকল্পের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা দরকার, তাহলে তারা অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ছাড়া সব ধরনের কেনাকাটা যতটা সম্ভব কমাতে হবে। তিনি বলেন, শপিংয়ে যা অবিলম্বে কেনা যাবে না, সেই জাতীয় কেনাকাটা চলবে। সেই ক্রয়গুলি আপাতত স্থগিত করা হবে, যদিও সেগুলি আপাতত কেনা না হয়৷ উদাহরণস্বরূপ, একটি গাড়ী কেনার দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করা হয়।
তিনি বলেন, বিদেশে প্রশিক্ষণের বিষয়ে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে কেনাকাটার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তা করা যেতে পারে। বৈদেশিক সাহায্য-সংক্রান্ত বিষয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে। অর্থাৎ, সরকারি অর্থ সংগ্রহের বিষয় ছাড়া বিদেশে ব্যবহার করা যাবে না। বিষয়টি স্পষ্ট করতে গিয়ে তিনি বলেন, যেমন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১০ জন সরকারি টাকায় স্টাডি ট্যুরে যাবেন, তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয়গুলো এখন ট্রেজারি থেকে বিল করা কোনো বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবে না। সরকারি টাকায় সব বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। তবে টেন্ডারে দরপত্রদাতাদের খরচে প্রযুক্তি স্থানান্তর সংক্রান্ত বিদেশ সফর বন্ধ হবে না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। কোথাও এক ফসলি জমি আছে, সেখানে তিন ফসলি করার কথা ভাবতে বলেন তিনি।
বাড়ির উঠোনে সবজি চাষের কথা বললেন। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে একটু সহযোগিতা করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ আমরা এটা জানি না, পরশু এবং পরশুর মধ্যে চুক্তি ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে আবার বোমা হামলা হয়। বন্দর ছাড়া ইউক্রেন থেকে খাবার আসবে কীভাবে? এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে খাদ্য ও সার সংগ্রহের চেষ্টা করছে। আমরা জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে যে আমরা যে কোনো মূল্যে মিতব্যয়ী হতে পারি; অযথা জ্বালানি ও অর্থ অপচয় করবেন না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে আমার কার্যালয়ের জানালার পর্দা তুলে দিয়েছি, ছোট লাইট নিভিয়ে রেখেছি।’
এছাড়া বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সরকারি-বেসরকারি যানবাহন ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মহামারী এবং সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও ব্যয়ের লাগাম টানতে হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংরক্ষণ এবং মজুদ রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে সব সরকারি অফিসে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমাতে এবং খরচ সাশ্রয় ও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আটটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিবদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের খরচ সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে নতুন অর্থবছরে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সব ধরনের যানবাহন ক্রয় করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে, সেইসাথে সকল উন্নয়ন প্রকল্পের সভা সম্মানী প্রদান স্থগিত করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন বাজেট খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ সংরক্ষণ ও কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।