‘খারাপ হলে দেশে আনলে কেন’

0

সয়াবিন তেল কম খান, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর: টিপু মুনশি, বাণিজ্যমন্ত্রী

অস্থির ভোজ্যতেলের বাজারের মধ্যে সয়াবিন ও পাম তেল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে ভোক্তাদের ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ডাক্তারসহ সবাইকে বলা উচিত সয়াবিন ও পাম তেল ক্ষতিকর।

বুধবার দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাজারের অব্যবস্থাপনা দূর করতে এবং ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ না করে ভোক্তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করতে বাণিজ্যমন্ত্রীর পরামর্শে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভোক্তারা। বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর শান্তিনগর বাজারের এক ক্রেতা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী সয়াবিন ও পাম তেল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে কম খাওয়ার পরামর্শ দেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি মন্ত্রীর পরামর্শ মেনে চলা উচিত বলে মনে করেন কিনা। জবাবে নাজমুল হাসান নামের ওই ক্রেতা বলেন, যে দেশের সয়াবিন বা পাম অয়েল ছাড়া একদিনও চলে না সে দেশের মন্ত্রীর কথা অনুচিত। দেশে যদি পর্যাপ্ত চালের কুঁড়া, সরিষা বা অন্যান্য তেল থাকত এবং দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকত, তাহলে এই পরামর্শগুলো অর্থবহ হতো।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আসাদুজ্জামান বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী এতদিন সয়াবিন তেল খাচ্ছেন। এখন বলুন, সয়াবিন তেল শরীরের জন্য খারাপ। তাহলে এতদিন বাজে তেল আনলে কেন? এখন তিনি বলেন, আমি রাইস ব্রান অয়েল বানাবো। রাইস ব্র্যান অয়েল ৫০-৬০ হাজার থেকে সাত লাখ টন নেব। এটি সহজ! তিনি যদি বলেন, আমি ৫০-৬০ হাজার থেকে এক লাখ টন নেব, সেটা ছিল এক কথা।

কিছু বাজার বিশ্লেষকও মনে করেন, সয়াবিন ও পাম তেলের স্বাস্থ্যগত প্রভাব বিশ্লেষণ না করে এই মুহূর্তে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর দিকে বাণিজ্যমন্ত্রীর বেশি নজর দেওয়া দরকার। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এই মুহূর্তে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়ানো জরুরি। প্রথম এবং সর্বাগ্রে, তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটানো এবং মানুষের দুঃখকষ্ট হ্রাস করা। অন্যদিকে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। তবে খাদ্যাভ্যাস রাতারাতি পরিবর্তন হবে না।

গতকালের বৈঠকের পর বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার ভীতি সৃষ্টি করে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চায় না। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশীয় বাজারে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় সরকার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, যে কারণে দেশের বাজারেও দাম বাড়ছে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর নির্ভর করবে, নাকি অভ্যন্তরীণভাবে ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়াবে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সরিষা চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই ধানের মাঝখানে সরিষা চাষের জন্য প্রচুর জমি রয়েছে। ফলে সরিষা চাষ বাড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে যে পরিমাণ চাল উৎপাদিত হয়, তাতে সাত লাখ টন রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদিত হচ্ছে। তবে রাইস ব্র্যান অয়েলের দাম কী হবে এবং তা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পড়বে কিনা তা দেখার বিষয়। এছাড়া রাইস ব্র্যান অয়েলের উপকারিতা সকলকে জানাতে হবে। এটা সত্য যে সয়াবিন এবং পাম তেল মানবদেহে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *