হালদায় নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ

0

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেল এবং কালিবাউসের মতো কার্প প্রজাতির নমুনা ডিম দিয়েছে। কয়েকদিনের বজ্রপাত ও বৃষ্টির কারণে শনিবার মধ্যরাতে মা মাছ প্রাথমিকভাবে ডিমের নমুনা ছাড়ে।

এরপর সোমবার সকালে আবারও নমুনা ডিম দেয় মা মাছ। তবে ডিমের পরিমাণ ছিল খুবই কম। ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর, শহিদ, শফি ও হাফিজ কবির জানান, উপজেলার নয়াহাট বাজার, আজিম ঘাটা, পুরালিয়া স্লুইসগেট ও গাড়দুয়ারা ইউনিয়নের মশুয়া ঘোনাসহ হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মা ও মাছ ডিম পাড়ে।

পূর্ণ শক্তিতে ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় শতাধিক ডিম পাড়া নৌকাসহ তিন শতাধিক নৌকা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের জাল ফেলে। প্রতিটি নৌকায় গড়ে ২-৩ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। বিকেলে ভাটার সময় নদীতে ডিম পাড়ার আশায় কাঙ্খিত ডিম মেলেনি ডিম সংগ্রহকারীরা। বর্তমান পূর্ণিমাতে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে ডিম না দিলে আগামী পূর্ণিমাতে মা মাছ নদীতে ডিম দিতে পারে।

সাধারণত নমুনা ডিম পাড়ার পর মাছটি অনুকূল পরিবেশে নদীতে পূর্ণ শক্তিতে ডিম পাড়ে। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি সময়ে, মাদারফিশ নদীতে ডিম পাড়ে, অমাবস্যা ও জো-তে বজ্রপাত এবং উজান থেকে পাহাড়ের ঢালে। তবে ডিম পাড়ার উপযোগী এ সময়ে নদীতে পাহাড়ি ঢাল না থাকায় ও নদীতে মাছ পুরোপুরি ডিম না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।

গত ৪০ বছর ধরে হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন কামাল সওদাগর (৬০)। তিনি জানান, শনিবার মধ্যরাতে মা মাছটি নদীতে ডিমের নমুনা রেখে যায়। সোমবার সকালে মাছটি আবার ডিম পাড়ে। আমরাও বিকেলে ভাটার সময় নদীতে জাল ফেলি। ওই নৌকায় প্রায় ৮০ কেজি ডিম পাড়ছে; যা মোটেও আশানুরূপ নয়।

হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড.মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, সোমবার মাছটি নদীতে ডিম ছাড়ে। সাধারণত নদীতে পূর্ণিমা ও জো থাকে তখন হালদা নদীর সাত্তারঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত এসব এলাকায় মা মাছ ডিম পাড়ে। এবারও সে অবস্থা লক্ষ্য করা যায়নি। সোমবার সকালে মা মাছটি আবার নমুনা ডিম দেয়, তবে খুব কম পরিমাণে।

হাটহাজারী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত ও রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পীযূষ প্রভাকর জানান, এবার ডিম সংগ্রহের পরিমাণ খুবই কম। কারো ওজন ১০ কেজির বেশি, কারো ৫-৬ কেজি আবার অনেকে ডিম পায় না। আড়াই থেকে তিন হাজার কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহের পরিমাণ হবে বলে ধারণা করছি।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল আলম বলেন, হালদা নদীতে কেউ যেন মাছ চুরি করতে না পারে সেজন্য উপজেলা প্রশাসন নজরদারি জোরদার করেছে। এছাড়া হালদা উপকূলীয় এলাকার বাইরের বিভিন্ন হ্যাচারি ও খামারের ভেজাল পোনা ও পরাগ প্রতিরোধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *