প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন পাঠ্যক্রম। সৃজনশীলের কি হবে
২০১০ সালে মাধ্যমিক স্তরে ‘সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি’ প্রচন্ড ধুমধামের সাথে চালু করা হয়েছিল। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কেউই সে সময় এই পদ্ধতি সম্পর্কে ভালভাবে অবগত ছিলেন না। অভিভাবকদের সংগঠনগুলো তখন এর বিরোধিতা করে এবং মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এই পদ্ধতি, যা শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই চালু করা হয়েছিল, শুরুতে হোঁচট খেয়েছিল। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলও খারাপ ছিল। ১১ বছর কাজ করার পরে নতুন পাঠ্যক্রমটি নতুনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। শিক্ষকরা বলছেন, ধারণা করা যাচ্ছে, এই পদ্ধতি আর নেই।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে পাঠ্যক্রম প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতরাও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। সব মিলিয়ে কুয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, পাঠ্যক্রমের রূপরেখা শুধু চূড়ান্ত করা হয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। পরবর্তী বৈঠকের পর সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।
নতুন পাঠ্যক্রম (পাঠ্যক্রম) প্রণয়নে সরাসরি জড়িত এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, সৃজনশীল প্রশ্ন একটি বড় বিষয় নয়। যদি কোন শিক্ষার্থী বিষয়বস্তু জানে, তাহলে সে যে ফরম্যাটেই প্রশ্ন করুক না কেন সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় যে প্রশ্ন, চারটি অংশে জ্ঞান, দক্ষতা এবং উচ্চতর দক্ষতা যাচাই করা উচিত।
যাইহোক, এনসিটিবির পাঠ্যক্রম বিকাশের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা বলেছেন যে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি মোটেও নেই। এমনকি নতুন পাঠ্যক্রমের মূল্যায়ন অংশেও সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের কোন ধারণা নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার জাতীয় শিক্ষাক্রমের খসড়া রূপরেখার অনুমোদন দিয়েছেন। তারপর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সচিবালয়ে প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের অবহিত করেন। নতুন পাঠ্যক্রম আমাদের অধ্যয়ন এবং মূল্যায়নের পদ্ধতি পরিবর্তন করবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি একদিনের পরিবর্তে দুই দিন হবে। পড়ার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে। পাঠ্যক্রমের এই পরিবর্তন ২০২৩ থেকে শুরু হবে এবং ২০২৭ সালে শেষ হবে। তবে, ২০২৩ এবং ২০২৫ এর মধ্যে বড় পরিবর্তন ঘটবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে নতুন পাঠ্যক্রম প্রবর্তনের ফলে শিক্ষার কোনো সৃজনশীল পদ্ধতি বিদ্যমান নেই। পরিবর্তে অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা যোগ করা হবে। একই সময়ে, মূল্যায়নও পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়া সর্বোচ্চ জিপিএ পয়েন্ট ৫ এর পরিবর্তে ৪ করা হচ্ছে।
দেখা গেছে, শিক্ষাদানের নতুন পদ্ধতির জন্য পাঠ্যক্রম অনুমোদিত হলেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়ে তেমন কিছু বলা হচ্ছে না। গত ১০ বছরে সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে
আজ অবধি, হাজার হাজার শিক্ষক সেই পদ্ধতিটি আয়ত্ত করতে সক্ষম হননি। ফলস্বরূপ, সৃজনশীল প্রক্রিয়া নোটগাইডগুলির উপরও নির্ভর করে। তাই এখন প্রশ্ন উঠছে, নতুন পাঠ্যক্রম চালু হওয়ার আগে শিক্ষকদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যদি শিক্ষকদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ না দেওয়া হয়, তাহলে এই নতুন শিক্ষাদানের পদ্ধতি কোন সুফল বয়ে আনবে না।
এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, নতুন পদ্ধতিতে সৃজনশীল শিক্ষার বর্তমান অবস্থা এখন আর এরকম নাও হতে পারে। নতুন পাঠ্যক্রমের ধারাবাহিক মূল্যায়ন থাকায় প্রশ্নের ধরনও পরিবর্তিত হবে। এটি শিক্ষণ এবং শেখার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনবে। উপরন্তু, পড়াশোনার অনেক নতুন পদ্ধতি স্কুলে শেষ হবে। এটি শিক্ষার্থীদের ‘হোমওয়ার্ক’ হ্রাস করবে।