অধিগ্রহণের জমি বেহাত, নামজারিও অণ্যের নামে।ভূমি মন্ত্রণালয়ের অডিটেও প্রমাণ মিলেছে

0

গাজীপুরে সরকারি কাজে অধিগ্রহণ করা জমি মহার্ঘ্য হয়ে পড়েছে। জমি বিক্রির পর ক্রেতার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। জমি দখলের পেছনে ভূমি অফিস, এসিল্যান্ড অফিসের কর্মকর্তা ও স্থানীয় অসাধুদের ষড়যন্ত্র রয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অডিট প্রতিবেদনে ঢাকার অদূরে গাজীপুরে অধিগ্রহণকৃত জমির তথ্য উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক নির্মাণের জন্য প্রথম ধাপে ৪৭ একর ৬২ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এ জমির এলএ মামলা নং ৩/৯৮-৯৯। পরে অধিগ্রহণের গেজেটও প্রকাশিত হয়। ৪৭.২ একর জমি রাস্তার কাজে ব্যবহার করার পর অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ জমি বাসন ইউনিয়নের ভোগড়া মৌজার ৩০ ও ৫২ নম্বর খতিয়ানের ২০০ ও ৫৪৩ দাগে  রয়ে গেছে। গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিস ও বাসন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এ জমি বিক্রিতে সহায়তা করেন। পরে ৬০ শতাংশ জমি স্থানীয় ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি করা হয়।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ ম্যানুয়াল অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার নাম নিবন্ধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ জমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নামে নিবন্ধন করার কথা ছিল। গাজীপুর সদর উপজেলা এসিল্যান্ড কার্যালয় ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নামকরণের কাজ করার কথা থাকলেও সময়মতো কাজ হয়নি। এবং গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সম্ভাব্য কোম্পানির (যে কোম্পানির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল) নামকরণ করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং ভূমি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো নামকরণ করা হয়নি এবং বিষয়টি ভূমি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়নি।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব নিয়ন্ত্রক (রাজস্ব) মো. মশিউর রহমান বলেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে জমি রেজিস্ট্রি করা থাকলে কোনো ব্যক্তির নামে জমির নামকরণ করা সম্ভব হতো না। গাজীপুরের ৬০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি না থাকায় তা দখল করে নিয়েছে স্থানীয় এক ব্যক্তি। পরে তার নামও রাখা হয়। স্থানীয় এসিল্যান্ড অফিস এবং ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা অধিগ্রহণ করা জমি নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের গাজীপুরের হিসাব সুপার (রাজস্ব) মো. আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে একটি পরিদর্শন দল সম্প্রতি জেলার সদর উপজেলা ভূমি অফিসের বিভিন্ন নথিপত্র পরীক্ষা করে। এমন সময় হঠাৎ করেই ভূমি অধিগ্রহণের (এলএ) নং ৩/৯৮-৯৯ মামলাটি সামনে আসে। এরপর ৬০ শতাংশ জমি অকেজো।

অডিটের সঙ্গে জড়িত ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জমির আগের মালিক অধিগ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে সম্ভাব্য কোম্পানির নাম নিবন্ধন না করায় এলাকায় প্রচারণা শুরু করেন- তিনিই ৬০ শতাংশ জমির মালিক। জমির তার নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম রেজিস্ট্রি না হওয়ায় এলাকার লোকজনও ধরে নেয় জমির মালিক সরকার নয়, দখলদার নিজেই। পরে সে জমিটি অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়। এবার ক্রেতার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এভাবে জমি বিক্রি করে নাম করা হয়।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অডিট প্রতিবেদনে জমি ব্যক্তিমালিকানা থেকে ছেড়ে দিয়ে তাদের নামে নামকরণ বাতিল করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নামে গেজেট প্রকাশের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *