টিসিবি পণ্য।এবার ভোটের মতো ক্রেতার হাতে কালি

0

তপ্ত সূর্য। ঘড়িতে তখন বারোটা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিজয় সরণির কাছে কলমিলতা বাজারের সামনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যবাহী ট্রাক থামে। ইতিমধ্যেই হৈচৈ ছিল। এ সময় ট্রাকটি ঘিরে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়।

এমন প্রেক্ষাপটে ক্রেতা সামলাতে সবাইকে লাইনে দাঁড়াতে বলেন ট্রাক বিক্রয়কর্মী। তারপর ক্রয়কারীর হাতের তালুতে অমোচনীয় লাল কালি দিয়ে ক্রমিক নম্বর ১,২,৩, লিখে দেন। উদ্দেশ্য ছিল ২টি, যে সিকোয়েন্সের বাইরের কেউ পণ্যটি কিনতে না পারেন ; একজন ক্রেতাকে দ্বিতীয়বার লাইনে দাঁড়াতে হবে না। ভোটারদের সাধারণত ভোট দেওয়ার পর তাদের আঙুলে অমোচনীয় কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয় যাতে কেউ জাল ভোট দিতে না পারে। সেই কালি এবার টিসিবির ক্রেতাদের হাতে উঠেছে।

তবে এই নম্বর লিখে কোনো কাজ হয়নি। অনেক ক্রেতা সিরিয়াল ভেঙে লাইনে ঢোকার চেষ্টা করলে ট্রাকটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তেজকুনিপাড়ায় বিজয় সরণি ফ্লাইওভারের নিচে চলে যায়। স্থানীয়দের কাছে জায়গাটি ‘ফকিরনি বাজার’ নামে পরিচিত। হাল ছাড়েননি ক্রেতারাও। কেউ রিকশায়, কেউ পায়ে হেঁটে ট্রাকের পেছনে ছুটছে। হাতে লেখা কলমিলতা বাজারের ক্রেতারা তেজকুনিপাড়া এলাকায় যাওয়ার আগেই শত শত মানুষ ট্রাকটিকে ঘেরাও করে। এখানে এসেও ক্রেতার চাপে পড়ে ট্রাক। ক্রেতারা তাদের হাতে লেখা সিরিয়াল নম্বর দেখিয়ে পণ্য সরবরাহ করার জন্য বিক্রয় কর্মীদের অনুরোধ করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে সেলসম্যানরা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ে যান। ২৭ ও কমিশনের সহায়তা চেয়েছেন। পরে স্থানীয় কয়েকজনের নির্দেশে ক্রেতাদের সারিবদ্ধ করা হয়। গতকাল তেজগাঁওয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে মারামারির চিত্র দেখা গেছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের দ্বাদশ ওয়ার্ডের হাবুলের পুকুরে এমনই ঘটনা দেখা যায়। শত শত লোক সেখানে উপস্থিত হয় এবং তাদের হাতে কালো কালি দিয়ে গণনা করা হয়।

তেজকুনিপাড়ায় টিসিবির পণ্য বিক্রির ডিলার হাসমত বলেন, গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে যায়। এজন্য ক্রেতাদের ক্রমিক নম্বর দেওয়া হয়েছে।

হাবুলের পুকুরে পণ্য বিক্রি করতে আসা স্বপ্না এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, ক্রেতাদের তাড়া ছিল। লাইন ধরতে ঝামেলা। সে কারণেই সিরিয়ালটি লেখা হয়েছে। তবে তাতে কাজ হয়নি। ক্রেতারা দুই থেকে তিন সারিতে সারিবদ্ধ।

একজন ক্রেতা পাচ্ছেন এক লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকায়, এক কেজি চিনি ৫৫ টাকায়, মসুর ডাল ৭৫ টাকায় এবং এক কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকায়। দুই লিটার সয়াবিন, দুই কেজি চিনি কেনার সুযোগ রয়েছে। মসুর ডাল এবং পেঁয়াজ জনপ্রতি। একজন ক্রেতা ৫১০টাকায় এসব পণ্য কিনতে পারবেন। তবে বর্তমানে বাজারে সয়াবিন প্রতি লিটার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, চিনি ৬০ টাকা কেজি, ডাল ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি এবং পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে বাজার থেকে দুই কেজি কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হচ্ছে ৮১০ থেকে ৯১০ টাকা। টিসিবি পণ্য কিনলে ক্রেতা প্রতি ২৯০ থেকে ৩৯০ টাকা সাশ্রয় হয়।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ঢাকার বাইরে কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দেওয়ার উদ্যোগ ভালো। তবে টিসিবির উচিত স্থানীয়ভাবে পণ্য আমদানি না করে নিজস্ব উদ্যোগে আমদানি করা। এতে স্থানীয় বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত হবে।

প্রতিদিন ১৫০টি ট্রাকের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। প্রথম ধাপে বিক্রি চলবে ২৪ মার্চ পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপে ২৭ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত পণ্য বিক্রি হবে। তবে শুক্রবার বিক্রি বন্ধ থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *