আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিত করবে না মাঠ প্রশাসন।শনিবার নেতাদের জরুরি বৈঠক
মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের লাগাতার ধর্মঘট তৃতীয় দিনে পড়ল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আন্দোলন বন্ধে নানা আশ্বাস দিচ্ছেন। তাদের আশ্বাস না মেনে শ্রমিক সংগঠনগুলোর জরুরি বৈঠক ডেকেছেন নেতারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার অফিস এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (বিবিসিসিএস) এবং বাংলাদেশ কালেক্টরেট অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাস) নেতাদের বুধবার সচিবালয়ে তলব করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে চার ঘণ্টা বৈঠক করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় কর্মচারী সমিতির (বেবিসিসিএস) মহাসচিব কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, বৈঠক হলেও আন্দোলন স্থগিত করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নবীরুল ইসলাম আমাদের আন্দোলন স্থগিত করতে বলেছেন, সমস্যার সমাধান করা হবে। তিনি পদবী পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি। এর প্রেক্ষিতে সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটিতে আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমরা বলেছি। বৈঠকের বিষয়টি কমিটির নেতাদের জানানো হয়েছে। এ জন্য আগামী শনিবার ঢাকায় জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতেই ফোনে নেতাদের সচিবালয়ে আসার আহ্বান জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-৩) রিপন চাকমা। বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার অফিসের কর্মচারী সমিতির মহাসচিব কাজী মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ কালেক্টরেট অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাস) মহাসচিব মো: আনোয়ার হোসেন, বাচ্চু সদস্য মোহাম্মদ সাজিরুল হক ও খোরশেদ আলম। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন বিভাগ) নবীরুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব আবুল হাসানাত হুমায়ুন কবির ও উপসচিব রিপন চাকমা। বিকেল সাড়ে ৪টায় বৈঠক শুরু হয়ে রাত ৮টার দিকে শেষ হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, পদবী পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নীত করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বিভাগে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তারা ফেরত পাঠিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আবার সেই প্রস্তাব পাঠাবে। শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কথা হয়েছে। আশা করছি, তারা তাদের ধর্মঘট কর্মসূচি প্রত্যাহার করবে।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে শ্রমিকদের আন্দোলন স্থগিত করার প্রস্তাব দেন। ডিসিরা কর্মীদের জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। এ জন্য তিনি আন্দোলন স্থগিত করতে বলেন। তবে তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি কর্মীরা। অন্তত ৫০টি জেলার কর্মচারীরা নেতাদের জিইও না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত না করার আহ্বান জানিয়েছেন। এক কর্মচারী নেতা জানান, আন্দোলন শুরু হলেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ফোন করে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু এটা কাজ করে না। তবে তাদের পদোন্নতির সঙ্গে আমাদের দাবির কোনো আর্থিক সম্পর্ক নেই। এরই মধ্যে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীরা তিন টাইম স্কেল পাওয়ার ফলে কমপক্ষে ১৩তম গ্রেডের বেতন পাচ্ছেন। তবে প্রস্তাবিত পদবি পরিবর্তন করে গ্রেডে পদোন্নতি হলে সরকারের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে না। কর্মচারীরা শুধু সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে চান।
উল্লেখ্য, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (জেলা প্রশাসক) এর ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাগ্রহীতারা।