রাশিয়ার লুক অয়েলের পরিবেশক হচ্ছে পদ্মা। আপত্তি ফ্রান্সের টোটালের
রাশিয়ার লুক অয়েলের পরিবেশক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল। পদ্মা দেশের বাজারে লুকের ইঞ্জিন তেল ও অন্যান্য লুব্রিকেন্ট পণ্য বিক্রি করে। তাই শিগগিরই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তি হতে পারে। পদ্মা অয়েল বর্তমানে ফ্রান্সের টোটাল কোম্পানির লুব্রিকেন্টের পরিবেশক। লুকের সাথে চুক্তি হলে মোট বাদ পড়বে টোটাল। পদ্মা অয়েলের উদ্যোগের বিরোধিতা করে সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের কাছে চিঠি দিয়েছে টোটাল। পদ্মা চুক্তি লঙ্ঘন করতে যাচ্ছে বলে দাবি টোটাল। জ্বালানি বিভাগ ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি পদ্মা অয়েলের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) নুমান আহমেদ তফাদার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) বরাবর পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ইঞ্জিন অয়েল বাজারজাত করতে ল্যুক অয়েল ও পদ্মা অয়েলের মধ্যে শিগগিরই একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এই ইঞ্জিন তেল সংরক্ষণের জন্য চট্টগ্রামের পতেঙ্গার গুপ্তখালে কোম্পানির প্রধান কেন্দ্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউস স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে লুক অয়েলসহ রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কোম্পানি রয়েছে। লুক অয়েলের সঙ্গে চুক্তির প্রভাব পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে লুক অয়েলের পরিবেশক করোনা গ্রুপ।
বর্তমানে পদ্মা নিজস্ব ব্র্যান্ডের পাশাপাশি টোটাল ব্র্যান্ড লুব্রিকেন্ট বাজারজাত করছে। লুক অয়েলের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করেছে টোটাল। বাংলাদেশে টোটাল লুব অয়েলের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামভিত্তিক ট্রেড সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল গত ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে চিঠি দেন।
ট্রেড সার্ভিসেসের পরিচালক সৈয়দ সামিউল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে যে টোটাল বাংলাদেশের পেট্রোলিয়াম সেক্টরে যাত্রা শুরু করে ২৮অক্টোবর, ১৯৯৭ সালে একটি এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য বিপিসির সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। সে সময় শেল অয়েল পদ্মা অয়েলের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। পদ্মা অয়েলের তৎকালীন এমডি সৈয়দ তানভীর হোসেনের অনুরোধে টোটাল পদ্মা অয়েলের মাধ্যমে বাংলাদেশে লুব বাজারজাত করার উদ্যোগ নেয়। দুটি কোম্পানির মধ্যে ১৯৯৯ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল। তারপর থেকে, পদ্মা অয়েল দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে টোটালের লুব্রিকেন্ট বাজারজাত করে আসছে। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে যে টোটাল বাদ দিয়ে রাশিয়ার লুক অয়েলের সাথে চুক্তিতে করলে চুক্তির লঙ্ঘন হবে।
বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করলেও এসএমএস করে বিষয়টি জানতে চান। এ বিষয়ে এসএমএস-এর মাধ্যমে তার মতামত জানতে চাইলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, তারা একটি মার্কেটিং কোম্পানি। যে কোম্পানি পণ্য বাজারজাত করে লাভবান হবে তার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
লুব্রিকেন্ট পণ্যের মধ্যে দেশে ইঞ্জিন তেলের চাহিদা ১ লাখ ৬০ হাজার টন। সরকারি কোম্পানি ছাড়াও অনেক বেসরকারি কোম্পানিও মবিল, টোটাল, বিপি, ক্যাস্ট্রলসহ বিভিন্ন বহুজাতিক ব্র্যান্ডের অধীনে লুব্রিকেন্ট অয়েল ব্লেন্ডিং পণ্য বিক্রি করছে।