নির্বাচন কমিশন গঠন।স্বচ্ছতার জন্য প্রস্তাবিত নাম প্রকাশের দাবি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে ১০ প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে সার্চ কমিটি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের প্রস্তাবিত ৩২২ জনের মধ্যে থেকে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই ১০ জনের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে কমিটি।
তবে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর আগে ১০ জনের নামের তালিকা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সার্চ কমিটি। তবে স্বচ্ছতার স্বার্থে তা প্রকাশ করতে হবে।
আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির সুপারিশকৃত নামের তালিকা প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নেই। আইনে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি ‘স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতিমালা’ অনুযায়ী কাজ করবে।
এ প্রসঙ্গে সিটিজেনস ফর গুড গভর্নেন্স (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সার্চ কমিটির নাম প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, সার্চ কমিটি নাম প্রকাশ না করলে স্বচ্ছতা থাকবে না। কারণ, স্বচ্ছতা মানে কোনো কিছু গোপন না করা। আইনের ওই ধারায় আরও বলা হয়েছে, আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে সার্চ কমিটি নাম সুপারিশ করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন পাসের সময়, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তদন্ত কমিটির সুপারিশকৃত নাম প্রকাশের এবং এ বিষয়ে বক্তব্য রাখার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। বিএনপির এমপি রুমিন ফারহানারও অনেকটা একই রকম প্রস্তাব ছিল। তিনি বলেন, সংশোধনী প্রস্তাবে সার্চ কমিটির সুপারিশকৃত নাম এবং যোগ্যতা ও সম্পদ হলফনামা আকারে প্রকাশ করতে হবে এবং নামের ওপর গণশুনানি করার বিধান রাখতে হবে। বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ইসি পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃতদের সিভি প্রকাশের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। এসব প্রস্তাবের কোনোটিই গৃহীত হয়নি।
সার্চ কমিটির সঙ্গে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বৈঠকেও অনেকে নাম প্রকাশ না করার দাবি জানান। সুজন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে মনোনয়ন জমা দেওয়ার তিন দিন আগে নাম প্রকাশ করতে হবে। এরপর নাম প্রকাশ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে সার্চ কমিটি। অবশেষে গত রোববার সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, কমিটি আইন অনুযায়ী পদ্ধতি নির্ধারণ করবে। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনে বলা হয়েছে, আমরা (সার্চ কমিটি) পদ্ধতি নির্ধারণ করব। আমরা সেসব (চূড়ান্ত) নাম প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিশেষাধিকার। মহামান্য রাষ্ট্রপতি নাম দেওয়ার পর, তিনি যদি আমাদেরকে এটি প্রকাশ করতে বলেন, তবেই তা প্রকাশ করা হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সার্চ কমিটি প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলে প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হতো। তা না করলে মানুষের মনে সন্দেহ জাগবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, আইনের চেয়ে জনগণের প্রত্যাশা বড়। কমিশনকে ঘিরে দেশের ক্ষমতাধর নাগরিকদের দাবি ও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী ইসি গঠন করা হচ্ছে। সংসদে আইনটি পাস হওয়ার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর গত ৬ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি পর্যায়ে আগ্রহীদের নাম আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। রাজনৈতিক দলগুলোর নামকরণের সময়ও বাড়ানো হয়েছে। তবে বিএনপিসহ ১৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নাম প্রস্তাব করেনি।