সাতকানিয়ায় ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা।আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারী সন্ত্রাসীরা কারা?

0

মুখে মাস্ক. গলায় মাফলার। হাতে গ্লাভস। জিন্স প্যান্ট পরনে। সিনেমার দৃশ্যের মতো গুলি ছুড়ে এগিয়ে যাচ্ছে এক যুবক। আরেকজনের গলায় জ্যাকেট ও চামড়ার ব্যাগ। সে হেলমেটে মাথা ও মুখ লুকিয়ে একনলা বন্দুক নিয়ে দৌড়াচ্ছে। তার পাশে নীল জ্যাকেট ও জিন্স পরা আরেক যুবক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলি চালাচ্ছিল। এভাবেই বন্দুক নিয়ে গুলি চালাচ্ছে আরও কয়েকজন। গত সোমবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার খাগরিয়া, নলুয়া, বাজালিয়া, সোনাকানিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নির্বাচনে সন্ত্রাসীদের এমনভাবে ভোট দিতে দেখে হতবাক দেশের মানুষ।

নলুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা হাবিবুল আজিম বলেন, ‘আমার ৭০ বছরের জীবনে অনেক ভোট দেখেছি। অস্ত্র নিয়ে এমন প্রকাশ্য মহড়া দেখিনি। এরা কারা? এমন প্রশ্নের জবাবে সাতকানিয়া থানার ওসি আব্দুল জলিল বলেন, “স্থানীয়দের সহায়তায় বহিরাগতরা মহড়া দিতে এসেছে। এ জন্য আসামিদের ধরতে তড়িঘড়ি করতে হবে। ‘

ভোটকেন্দ্রে এত অস্ত্র দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে সাতকানিয়ার মানুষ।

সাতকানিয়া থানায় তিনি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হকের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন নির্বাচনে এত অস্ত্রের ব্যবহারে আমরাও বিস্মিত। যারা এই মহড়া দিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার না করা হলেও সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে একটি এলজি উদ্ধার করা হয়েছে। জসিম নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িতদের মধ্যে বিদেশি অস্ত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন: নিহতদের একজন স্থানীয় বাসিন্দা নয়। তিনি ফটিকছড়ির বাসিন্দা। থাকেন চট্টগ্রাম শহরের কাস্টমস এলাকায়। তার বিরুদ্ধে বোয়ালখালী থানায় ডাকাতির মামলা রয়েছে। মামলায় একবার  গ্রেফতার করেছিল বায়েজিদ থানা পুলিশ। হামলার ঘটনায় দেশি-বিদেশি যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

তসিবের গলায় একটি গুলি, শুক্কুরের শরীরে চারটি গুলি : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্তের সময় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র তসিবের গলায় ধারালো অস্ত্রের চিহ্ন পেয়েছেন চিকিৎসকরা। গুলিতে নিহত আব্দুস শুক্কুরের শরীর থেকে চারটি গুলি বিস্ফোরিত হয়। ডাক্তার তার বাম হাত, ডান পা, ঘাড়ের ডান পাশ এবং পেটের ডান পাশে একটি গুলি করে। তবে লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট করা সাতকানিয়া থানার এসআই মাহাবুবুল আলম বলেন, শুক্কুরের শরীরে সাতটি গুলির চিহ্ন পেয়েছি।

কার বিরুদ্ধে অভিযোগ : খাগড়িয়া ইউনিয়নে এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরও কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে। ভোটের দিন নৌকা প্রার্থী আখতার হোসেন বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ জসিম উদ্দিনের অনুসারী খায়ের আহমেদ, মোঃ হান্নান, ফুল নাসির, জাফর আহমেদ, সারেং রফিক, ডাকাত নুরুল আলম, ডাকাত সিরাজ, শিবির ক্যাডার তামিম, আরিফ ও দেলোয়ার। হোসেন কেন্দ্রে হামলা চালান। এ সময় তাদের হাতে অস্ত্র দেখা যায়। অভিযোগ করে জসিম উদ্দিন বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিদেশি সন্ত্রাসীদের নিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করতে এলে এলাকার লোকজন তাদের প্রতিহত করে। এ সময় সন্ত্রাসী সাইফুদ্দিন হাসান শাহী, হাসান মাহমুদ, সারোয়ার, কালা সুমন, ডাকাত ওসমান ও শওকত লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তবে দুই প্রার্থীই বহিরাগত বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লেয়াকত আলী বলেন, “এটি একটি ষড়যন্ত্র। তৃতীয় কোনো পক্ষ এটি ঘটিয়েছে। শিশুটির বাবা আমার ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য কাজ করছিলেন। আমার লোকজন কেন তার ছেলেকে মারবে?’ তার ভাতিজা মাসুদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার ভাতিজা মাসুদ সব সময় আমার সঙ্গে ছিল।

একসঙ্গে এত অস্ত্র দেখে হতবাক সাতকানিয়ার মানুষ: হুমায়ুন কবিরের বয়স ৭৫ বছর। থাকেন নলুয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনে এত বন্দুক আগে কখনো দেখেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *