একসঙ্গে হলো পাঁচ ভাইয়ের শেষকৃত্য

0

চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ট্রাকচাপায় নিহত পাঁচ ভাইয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে চকরিয়ার ডুলাহাজারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে দূরে একটি হিন্দু শ্মশানে পৃথক চিতায় তাদের একে একে শেষকৃত্য  হয়।

স্থানীয়দের মতে, অনুপম শীল (৪৮) প্রথমে শেষকৃত্য হয়। পরে, নিরুপম শীল (৪৫), দীপক শীল (৪০), চম্পক শীল (৩৮) এবং নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শরণ শীল (৩৬)  শেষকৃত্য হয়। বিকেল সাড়ে ৫টায় শেষ হয় পাঁচ ভাইয়ের জানাজা। উপজেলার হিন্দু-মুসলিমসহ তিন শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে শোকাবহ পরিবেশে তাদের বিদায় জানানো হয়।

এদিকে, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল রোড থেকে পাঁচ ভাইকে পিষে পালিয়ে যাওয়া মিনি ট্রাকটিকে হাইওয়ে পুলিশ জব্দ করেছে। বিকেলে ট্রাকটি জব্দ করা হয়।

মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক শেফায়েত হোসেন বলেন, বিকেলে ওই এলাকা থেকে পেঁয়াজ ও আলু বোঝাই একটি মিনি ট্রাক জব্দ করা হয়।

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পাঁচ ভাইকে পিষ্ট করে রংমহল এলাকায় ট্রাক রেখে চালক হেলপার পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে এলাকা থেকে ট্রাকটি জব্দ করে হাইওয়ে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাকের চালক ও মালিকের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

উল্লেখ্য, ডুলাহাজরার রিংভং হাসিনাপাড়ার বাসিন্দা সুরেশ চন্দ্র শীল গত ২৮ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। হিন্দু ধর্মের নিয়ম মেনে তাকে শেষকৃত্য করা হয় এবং সুরেশ চন্দ্র শীলের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে শেষকৃত্যের পর আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে।

মৃত্যুর ১১ দিনে পিতার শ্রাদ্ধ হওয়ার কথা। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বসে কিছু আনুষ্ঠানিকতা করছিল আট ভাইবোন। তখনই ট্রাকটি তাদের পিষে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চার ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

ওই পাঁচ ভাইকে পিষে ফেলা ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে

গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুই ভাই ও দুই বোন। তাদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী খ্রিস্টান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে রাত ১১টার দিকে চিকিৎসকরা ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর পাঁচ ভাইয়ের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে এলে মনে হয়, ১১ দিন আগে স্বামীকে হারানো মনু বালা শীল (৬০) পাথর হয়ে যায়।

দুপুরে নিহত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়ির উঠানে সারিবদ্ধভাবে অনুপম, নিরুপম, দীপক, চম্পক ও স্মরণ শীলের লাশ পাওয়া যায়। পাশে তাদের স্ত্রীরা শোকে মুহ্যমান। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কাঁদছে। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। হিন্দুর পাশাপাশি মুসলমানরাও এসেছে। সুরেশ চন্দ্র শীলের পাঁচ ছেলের একসঙ্গে মৃত্যুতে শোকাহত সবাই। এই সব মিলিয়ে মনু বালাকে মনে হয় ‘পাথর’ হয়ে বসে আছে। কথা বলছে না, নড়ছে না। সে এতটাই দুঃখিত যে সে কাঁদতেও পারে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *