নগর-পৌরসভার মেয়ররা আত্মগোপনে, সেবা স্থবির
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ও জনসেবামূলক কার্যক্রমে ধস নেমেছে। বিশেষ করে ১২টি সিটি করপোরেশন, ৩২০টি পৌরসভা, ৬১টি জেলা পরিষদ ও ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রায় থমকে গেছে। নামমাত্রই খুলছে এসব অফিস। ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে রংপুর সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টি থেকে। গাজীপুরের মেয়র স্বতন্ত্র হলেও আওয়ামী গোত্রের। বাকি সবাই আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের মনোনীত বা সমর্থিত। ক্ষমতার পালাবদলের কারণে এসব জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশ ছেড়েও পালিয়েছে। ফলে দেশব্যাপী স্থানীয় সরকারের সেবা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। মেয়র, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অনুপস্থিতিতে উন্নয়নমূলক ও নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের বিষয়গুলোও বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
সার্বিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান নির্বাহীকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে যে কোনো মেয়র, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল একটি তালিকাও করা হয়েছে। তালিকার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত দেওয়া হতে পারে, বিশেষ করে যেখানে প্যানেল মেয়র নেই।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, মেয়র-চেয়ারম্যানদের কেউ যেতে বলেনি। তারা নিজেরাই আত্মগোপনে আছে বা দেশত্যাগ করেছে। তাদের অনুপস্থিতিতে কী হবে তার সারসংক্ষেপ আজ (মঙ্গলবার) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে। সম্ভবত প্রত্যেককে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হবে। যোগদান না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিটি মেয়ররা কোথায়?
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ৩ আগস্ট দেশ ছেড়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ড. আতিকুল ইসলাম শারীরিকভাবে অফিসে না আসলেও তিনি ঢাকায় অবস্থান করে অফিসিয়াল কার্যক্রম তদারকি করেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর ব্যবহৃত ফোনে ফোন করে সক্রিয় পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি ফোন ধরছেন না। এ ছাড়া খুলনা সিটির মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, গাজীপুর সিটির জায়েদা খাতুন, বরিশাল সিটির আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত), রাজশাহী সিটির এএইচএম খায়রুজ্জামান, চট্টগ্রাম সিটির রেজাউল করিম চৌধুরী, ময়মনসিংহ সিটির ইকরামুল হক টিটু, ময়মনসিংহ সিটির মেয়র এস. শহর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও কুমিল্লা সিটির ডা. তাহসিন বাহারের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। গতকাল পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। আর রংপুর সিটির মেয়র মো. মোস্তাফিজুর রহমানের (মোস্তফা) সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও জাতীয় পার্টির মনোনীত এই জনপ্রতিনিধি দেশেই আছেন বলে জানা গেছে।
মেয়রের অনুপস্থিতিতে দায়ী কে?
একজন মেয়র বা কাউন্সিলর যদি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত না থাকেন তাহলে তাকে অপসারণযোগ্য বলে গণ্য করা হবে। সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বোর্ড সভায় তিন প্যানেল মেয়রকে মনোনীত করা হয়। এটা সময় সময় পরিবর্তন সাপেক্ষে. কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে প্যানেল মেয়র মনোনীত হয়। তাদের মধ্যে দুজন সাধারণ কাউন্সিলর, অন্যজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর। মেয়রের অনুপস্থিতিতে, প্যানেল মেয়রদের মধ্যে থেকে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে দায়িত্ব পালন করবে।
বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগ
যখন একটি নতুন সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয় বা একটি সিটি কর্পোরেশন বিভক্ত হয় বা একটি সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়, তখন সরকার সিটি কর্পোরেশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তার কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা সরকারী কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করতে পারে।