রমজান ও কোরআনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত
পবিত্র রমজানুল মোবারক মাসে হযরত মোহাম্মদ (সা.) কলবে কোরআন নাজিল হয়েছে উল্লেখ করে আল্লামা শেখ সৈয়দ আফিফ উদ্দিন আল জিলানি আল বাগদাদি বলেছেন, রমজান মাসকে আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। রমজান মাস ও কোরআনকে গুরুত্ব দেওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বাগদাদ শরীফ দরবারের সাজ্জাদানশীন ও বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানির এই বংশধর।
গত সোমবার রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর আস্তানা-এ-ঈছাপুরী দরবার শরীফে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। হযরত মাওলানা শাহছুফী সৈয়দ আবদুচ্ছালাম ঈছাপুরী (রহ.) ৪০ তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে মাহফিল এন্তেজামিয়া কমিটি। এতে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন আঞ্জুমানে রহমানিয়া মঈনীয়া মাইজভান্ডার দরবারের সাজ্জাদানশীন শাহসুফী সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী আল মাইজভান্ডারী। সভায় সভাপতিত্ব করেন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান ও মাহফিল এন্তেজামিয়া কমিটির সভাপতি সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে সৈয়দ আফিফ উদ্দিন আল জিলানি বলেন, হযরত মোহাম্মদ মাস্তফা (সা.) এর উপর কোরআর নাজিলের পাশাপাশি রেসালত ঘোষণা হয়েছে রমজানে। ‘লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুল্লাহ’ পর্যন্ত রেসালতের এই বানিটাও রমজান মাসে হয়েছে। কোরআন শরীফ মক্কার জমিনে জবলে নুরে, গারে হেরায় রাসুলের উপর নাজিল হয়েছে; যেটি উম্মুল কিতাব, সেই কারণে মক্কার নাম হয়েছে উম্মুল কোরা। হযরত জিব্রাইলকে (আ.) ফেরেস্তাদের সরদার বলা হয়; তিনি সকল ফেরেস্তার সরদার হয়েছেন রাসুলের কাছে আসার কারণে।
আফিফ উদ্দিন বলেন, রাসুলের কলবে কোরআন নাজিল হওয়ার কারণে তিনি সৈয়্যদুল মোরসালিন হয়েছেন। তাহলে আমাদের অন্তরে কোরান নাজিল হলে আমাদের মর্যাদা কত বড় হবে? তাই রমজানে কোরআনকে বেশি বেশি মহব্বত করা উচিত। কোরআনকে মহব্বত করলে আমাদের মর্যাদা কত বড় হবে সেটা এখান থেকে বুঝে নিতে পারি।
চট্টগ্রামকে ‘মদিনাতুল আওলিয়া’ সম্বোধন করে বলেন, মাইজভান্ডার দরবার শরীফ জেয়ারত ও আবদুচ্ছালাম ঈছাপুরীর ওরসে হাজির হতে পেরেছি। এজন্য শুকরিয়া আদায় করে বলেন, এই রজমানে সবাইকে আল্লাহ কবুল করুন। বিশে^র সকল মুসলমানদের হেফাজত করুন। আপনারা অত্যন্ত ভাগ্যবান; কারণ অলি আল্লাহর শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। অলিদের আশপাশে আছেন।
পবিত্র কোরআনের উদৃতি দিয়ে সৈয়দ আফিফ উদ্দিন জিলানি বলেন, আল্লার মকবুল বান্দা অর্থাৎ কামেল অলিদের মানুষ জীবিত থাকতে স্মরণ করেছে; তারা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পরও স্মরণ করছে। আবদুচ্ছালাম ঈছাপুরী এমন একজন কামেল অলি। এটা আপনাদের জন্য বড় নিয়ামত। আল্লাহর অলিরা সাদিকিন (সর্বক্ষেত্রে সত্যবাদী) ছিলেন, সালাত, রোজা এবং রাসুলের জিকিরে থাকতেন। আমরাও যদি অলি আল্লাহদের জিকির করতে থাকি একদিন আল্লাহ আমাদেরও সাদিকিন বানিয়ে দিবেন।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সাদিকিন হলেন হযরত মোহাম্মদ (সা.)। তার জিকির এবং মহব্বতের কারণে সাহাবারা মর্তবা পেয়েছেন। আমরা অলিদের সাথে থাকলে আমাদের মর্যাদাও আল্লাহ বাড়িয়ে দেবেন। তাই সাদিকিনদের জিকিরে থাকা দরকার। আমরা অনেকে আল্লার অলিদের মজলিসে বসতে পারিনি। কিন্তু তাদের নসিহত শুনলে, ভালবাসার সম্পর্ক ও সোহবতে থাকলে সেই মহব্বতের কারণে দুনিয়া আখিরাতে ফায়দা দান করবেন।
হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রা.) উদৃতি দিয়ে তিনি বলেন, যদি তোমরা কখনো আল্লার অলিদের দেখ, তাহলে ধরে নাও, যেসকল মানুষ অন্তরে আল্লাকে দেখেছেন, তোমরা তাদেরকেই দেখেছ। আবদুল কাদের জিলানি দোয়া করতেন, আল্লাহ তুমি আমাদের সেই দলে অন্তর্ভূক্ত করো, যারা দুনিয়াতে অন্তরের চোখে তোমাকে দেখেছে এবং আখিরাতে কপালের চোখে তোমাকে দেখবে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত মানে মহব্বত মন্তব্য করে আফিফ উদ্দিন বলেন, আমরা মহব্বত ছাড়া কিছু জানি না। জানতেও চাই না। মহব্বত বিষয়ে আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমি বলেছেন, অনেকেই নিজস্ব একটা এবাদতের পন্থা আবিস্কার করেছেন। আর আমি মহব্বত ও ইশকের রাস্তা তৈরি করেছি।
প্রধান বক্তা শাহসুফী সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী বলেন, হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রা.) বংশধর মাইজভান্ডার দরবার শরীফ জেয়ারত করেছেন। এতে কাদেরিয়া ত্বরিকার সেতুবন্ধন আরও মজবুত হয়েছে। আমরা একসঙ্গে সারা বিশে^ ইসলাম ও কাদেরিয়া ত্বরিকার জন্য কাজ করবো। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর নির্যাতন চলছে। তারা সেহেরি ও ইফতার করতে পারছে না। ইহুদি-নাসারাদের নির্যাতন মোকাবেলা করার শক্তি তাদের দিক।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আফিফ উদ্দিন আল জিলানির শাহজাদা শেখ সৈয়দ আবদুর রহমান আল জিলানি আল বাগদাদী, শাহছুফী সৈয়দ আবদুচ্ছালাম ঈছাপুরীর আওলাদ শাহজাদা সৈয়দ সফিউল আজম, সৈয়দ আশরাফুজ্জামান, সৈয়দ আমানুল্লাহ আহসান, সৈয়দ এহসানুল করিম, সৈয়দ ফয়জুল আজিম ও সৈয়দ মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।