বিএনপির সেমিনারে বক্তারা। সংবিধানে থেকেই  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব

0

বক্তারা বিশ্বাস করেন যে পঞ্চদশ সংশোধনীর অধীনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনও সাংবিধানিক। বুধবার বিএনপি আয়োজিত এক সেমিনারে তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সারসংক্ষেপ রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী দুই জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হওয়ায় আগামী দুই সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে।

সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারি। নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় আন্দোলন। জাতির সামনে এর কোনো বিকল্প নেই।

রাজধানীর গুলশানের সিক্স সিজন হোটেলে ‘পঞ্চদশ সংশোধনীর সাংবিধানিকতা: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনও সাংবিধানিক’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ। সেমিনারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত আইনের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করা হয়।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে। তবে সুপ্রিম কোর্টের সারসংক্ষেপের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দুই সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। ওই সময় যারা মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) ছিলেন তাদের অধিকাংশই তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে ছিলেন। এ ছাড়া বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ রায় দেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে।

অনুচ্ছেদে বলা হয়, হাইকোর্টের রায় ও পর্যবেক্ষণকে উপেক্ষা করে এই সংশোধনী আনা হয়েছে, যা আইনের দৃষ্টিতে সঠিক নয়। তাছাড়া বিচারক অবসরে যাওয়ার পর রায় প্রকাশ করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও তর্ক উঠেছে। এখানে সামারি জাজমেন্ট ভুলভাবে সামারি জাজমেন্টে রূপান্তরিত হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে কোনো আইনি সুযোগ না দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

সেমিনারে আইনজীবী বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দল সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নজির এদেশে রয়েছে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে গণআন্দোলনে তৎকালীন সরকারের পতন হলে কে নির্বাচন করবে তা নিয়ে সংকট দেখা দেয়। এরপর সব দলই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে সরকার প্রধান করা হয়েছিল, যা সংবিধানে ছিল না। পরবর্তীতে, ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের পর, সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধতা দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালেও সব রাজনৈতিক দলের নিষ্পত্তি ইস্যু-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করা হয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব।

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংস্কারের বিষয়ে ২০০৬ সালে জাতীয় সংসদে ভাষণ দিয়েছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ২০০৭ সালেও সংস্কারের কথা বলেছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান কার্যকর ছিল।

নির্দলীয় সরকারের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, এ নিয়ে আজ আর কোনো বিতর্ক নেই। আজ গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। তারা পরিবর্তন চায় এবং তারা এই সরকারকে সরাতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে তারা নির্বাচনে যাবে না। এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসচিব ও মডারেটর সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন। সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান ফারুক প্রমুখ। সচিব ইসমাইল জবিহুল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডক্টর আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লা বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ। ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *