বিএনপি কী করতে পারে তা দেখে জামায়াত সিদ্ধান্ত নেবে।সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন

0

নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি কী করতে পারে তা দেখে আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেবে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ বা যুগপৎ আন্দোলনে ফেরার আলোচনা এখনো হয়নি। জামায়াতের প্রথম অগ্রাধিকার হল এক শতাব্দী ধরে বন্ধ থাকা পার্টি অফিস খোলার জন্য মার্কিন ভিসা নীতিতে আনা পরিবর্তনের সুবিধা নেওয়া। ঈদের পর কার্যালয়ে সভা করার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চাইবে দলটি।

গত শনি ও রোববার কার্যত অনুষ্ঠিত জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার বৈঠক ও দলটির নেতাদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তারা বলেন, বিএনপি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারলে জোট বা একযোগে না হলেও জামায়াত একাই আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে।

এক দশক পর গত ১০ জুন আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো জামায়াত পুলিশের অনুমতি নিয়ে রাজধানীতে সমাবেশ করে। এটা রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকার হঠাৎ করে দলের প্রতি নমনীয় হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জামায়াতের নায়েবে আমির ডক্টর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।

চলতি মাসের শুরুতে জামায়াত-বিএনপির মধ্যে আবার যোগাযোগ শুরুর গুঞ্জন উঠলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। ১০ জুনের সমাবেশের পর বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগ হয়নি । জামায়াতের আকস্মিক সমাবেশের অনুমতি নিয়েও সন্দেহ করছে বিএনপিও।

গত জুলাই থেকে একদলের দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেওয়া বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এমপি তাহের বলেন, জামায়াত নিজস্ব সিদ্ধান্তে এবং তত্ত্বাবধায়কের সামর্থ্য অনুযায়ী আন্দোলনে রয়েছে। সরকার, এটা অব্যাহত থাকবে।

২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের শুরু থেকেই জামায়াত কোণঠাসা। বিচার ঠেকাতে ডাকা কর্মসূচিতে সহিংসতার ঘটনায় দলটির অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামায়াতের হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা ৯৬ হাজার। রাজনীতি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘর্ষের পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। এরপর সারাদেশে একে একে সব অফিস বন্ধ হয়ে যায়। জামায়াত ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও অফিস খুলতে পারেনি।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, অফিস খুলতে পুলিশের কাছে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ঈদের পর পুলিশকে জানিয়ে অফিসে সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার পরিকল্পনা রয়েছে।

২০১৩ ও ২০১৫ সালে জামায়াত বিএনপির পাশাপাশি হরতাল-অবরোধে ছিল। ২০১৮ সালের পর দূরত্ব তৈরি হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দলের জোট ভেঙে গেলেও ১০ দফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলন শুরু করে জামায়াত। শফিকুর রহমানসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হামলার নিন্দা ও কর্মসূচির প্রতিবাদ না করায় জামায়াত যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায় দলটির ।

১০ জুনের সমাবেশ থেকে নির্দলীয় সুপারভাইজারদের পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামায়াত। আবদুল হালিম বলেন, গত রোববার জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম শুরার বৈঠকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে অনড় থাকার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

তবে মজলিসে শুরার সব সদস্য আন্দোলনের বিষয়ে একমত বলে জানান এই নেতা। তবে কর্মসূচির তারিখ ঠিক করা হয়নি।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জুলাই থেকে জোরালো আন্দোলন শুরুর কথা বলছে বিএনপি। দলটি সমমনা দলগুলোকেও একই কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। জামায়াত নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি রাজপথে কী করতে পারে এবং আন্দোলন কতটা জড়ো হতে পারে তার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে জামায়াত।

আবদুল হালিম বলেন, জামায়াতের সমাবেশ সফল হয়েছে। পরবর্তী আন্দোলনের গতিশীলতা পর্যবেক্ষণ করবে. আন্দোলন ধাপে ধাপে পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে।

দলটির নেতারা বলছেন, তারা মনে করছেন বিএনপি হরতাল-অবরোধে যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। বড়সড় সমাবেশ করে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করবে বিএনপি। কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেও জামায়াত রাজনীতি করবে। বড় বড় মিছিল-সমাবেশ করে শক্তি প্রকাশ করা হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীতির কারণে সরকার আগের মতো সমাবেশে বাধা দেবে না বলে আশাবাদী জামায়াত।

১০ জুনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে তা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি শেষ করার পক্ষে নয় জামায়াত নেতারা। এখনো দলটির নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হলেও আগের মতো গ্রেপ্তার হচ্ছে না। এছাড়া কারাবন্দী নেতাদেরও মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *