পাহাড় কেটে খেলার মাঠ, অনুমতি প্রশাসনের
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আইনের তোয়াক্কা না করে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে খেলার মাঠ। এতে পরিবেশ ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। এ কাজের অনুমতি দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পরিবেশ আইনে টিলা কাটা নিষিদ্ধ হলেও উপজেলার নারায়ণহাট ইউনিয়নে মাঠ নির্মাণে তা মানছে না কর্তৃপক্ষ। এমনকি মাটি কেটে বিক্রিরও অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে খেলার মাঠ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবকদের খেলাধুলায় উদ্বুদ্ধ করতে পরিত্যক্ত সরকারি জমিতে মাঠ নির্মাণের জায়গা নির্বাচন করেছে উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ফটিকছড়ির ইউনিয়নগুলোতে এ কার্যক্রম চলছে। তবে বেশির ভাগ মাঠ খাস জমিতে হলেও নারায়ণহাট ইউনিয়নে বেছে নেওয়া হয়েছে উঁচু পাহাড়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নারায়ণহাট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মাইজকান্দি এলাকায় মাঠ তৈরি হচ্ছে। ২.৬৯ একর টিলা কেটে এটি করা হচ্ছে। খননকারী মাটি কাটছে। তার পাশেই পুরনো কবরস্থান ও কৃষিজমি। মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কৃষি জমি।
নারায়ণহাট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, সমতল জমি থাকা সত্ত্বেও পাহাড় কেটে মাঠ তৈরি করা রহস্যজনক। চেয়ারম্যান নিজের লোকজন দিয়ে জমি বিক্রির জন্য ওই জায়গায় মাঠ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ভুল তথ্য দিয়ে বা উপজেলা প্রশাসনকে প্রভাবিত করে এটা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে মাঠটি নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মাঠটি ইউনিয়ন সদরে হওয়া উচিত। সদর দপ্তর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মাঠে সবাই সমান সুযোগ পাবে না। মাঠটি যেখানে অবস্থিত, এটি তুলনামূলকভাবে দুর্গম।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: সালাহউদ্দিন বলেন, মাঠ তৈরি করতে ঢিবি ও কবরস্থান কাটার দরকার ছিল না। পরিবেশের পাশাপাশি কবরস্থানেরও ক্ষতি হচ্ছে।
পরিবেশ আইন অনুযায়ী জাতীয় স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে টিলা বা পাহাড় কাটা বা অপসারণ করা যাবে। পাহাড় বা টিলা কেটে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনের সহযোগিতায় সেখানে স্তূপ কাটা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান বলেন, টিলা কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হবে। গত সপ্তাহে হাইকোর্ট পাহাড় কাটার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যখন যারা আইন বহাল রাখে তারা তা লঙ্ঘন করে।
ইউপি সদস্য জহির উদ্দিন আজম জানান, সমতল জমি না পাওয়ায় পাহাড় কেটে মাঠ তৈরি করা হচ্ছে। একই দাবি করে নারায়ণহাট ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ বলেন, জমি কেউ দেয়নি। পরিবেশ আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এটি জনস্বার্থে করা হচ্ছে। জমি বিক্রির সুযোগ নেই।
ইউএনও সাব্বির রহমান সানী জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এ কাজ চলছে। পরিবেশের ক্ষতি হবে না। কবরস্থানও রক্ষা করা হবে। ঢিবিটি বেশ উঁচু হওয়ায় মাঠের উপযোগী করতে দুই থেকে তিন ফুট মাটি কাটা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, টিলা কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নিতে হবে। বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।