তিন বছরের কাজ, ১৫ বছরে খরচ বাড়ছে সাড়ে ৩গুণ।ঢাকা-টঙ্গী ৩য় ও ৪র্থ রেললাইন প্রকল্প
ভারতীয় ঋণে তিন বছরের মধ্যে ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ রেললাইন এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ২০১২ সালের এই প্রকল্পটি ১১ বছরেও হয়নি। অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ এবং জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাজ কবে শেষ হবে তা এখনও অনিশ্চিত। তাই রেলওয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। ৮৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পের ব্যয় সাড়ে তিন গুণ বাড়িয়ে ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা করা হচ্ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। শুরুতে ভারতের ঋণের টাকা পেতে অসুবিধা ছিল। ঋণের শর্ত অনুযায়ী দেশের ঠিকাদাররা প্রকল্পে কাজ করছে। নথি অনুসারে, প্রথম উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী ৩০ জুন, ২০১৫ এর মধ্যে নির্মাণ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু এর ২৪ দিন আগে, ভারতীয় কোম্পানি RV-Aisha JV-কে রেলওয়ে বিস্তারিত নকশার পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করেছিল।
ডিপিপির প্রথম সংশোধনীতে, প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১,০৬০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৯০২ কোটি টাকা ভারতীয় ঋণ রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়ানো হয় ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত। কিন্তু দেড় বছর পরে, ভারতীয় ঠিকাদার Fcons এবং KPTL রেলওয়ের সাথে একটি যৌথ উদ্যোগ চুক্তি স্বাক্ষর করে। নির্মাণ কাজ শুরু হয় পরের বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।
সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী আরও দুই মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে রেললাইন, সেতু, স্টেশন ভবনের মতো অবকাঠামো নির্মাণে অগ্রগতি খুবই কম। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজ এগিয়েছে ৪৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় এবং সময় ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, রেলওয়ে ডিপিপিতে আরও একটি সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ভারতের ঋণ ২ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।
প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও, নথিতে বলা হয়েছে যে একই এলাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পর জমি হস্তান্তর করা হলে নবনির্মিত তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে ট্রেন চালানো সম্ভব। আগামী জুনে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে রেললাইন। বিদ্যমান দুটি রেললাইনের রেললাইন, স্লিপার ও ফিটিং পরিবর্তনের কাজ আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। জমি না পেলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
প্রকল্পের তৃতীয় প্যাকেজে টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের সাতটি স্টেশনে কম্পিউটারাইজড সিগন্যালিং ও ইন্টারলকিং কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দরপত্র আহ্বান করা হলেও বাজেটের অভাবে ঠিকাদার নিয়োগ করা যায়নি।
গত সোমবার রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পিআইসি বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নতুন রেললাইনের জন্য ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ (বাঁধ) নির্মাণ করতে হবে। গত এপ্রিল পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়েছে। ৯৬ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে মাত্র ১৯.২৯ কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়েছে। রেলওয়ের মহাপরিচালক সমকালকে বলেন, প্রতিটি প্রকল্পেই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকে। তাদের মুখোমুখি হতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে। রেলওয়ের কোনো গাফিলতি নেই। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি ও হারের সময়সূচি পরিবর্তনের কারণে খরচ বাড়ছে।
ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল করে। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, কমলাপুর থেকে দিনে ৭২টি ট্রেন চলাচল করে। তৃতীয় এবং চতুর্থ লাইন নির্মাণের ফলে ১৪৪টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণের পর ঢাকার সঙ্গে ট্রেন সংযোগে সময় লাগবে কম।
রেলের কর্মকর্তারা সুবিধার কথা বললেও অন্যান্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন এখনও অনিশ্চিত। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বাবিচক) সঙ্গে রেলওয়ের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। মালিবাগ থেকে খিলগাঁও পর্যন্ত রেলওয়ের জমিতে সড়ক নির্মাণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণ করতে চায় রেলওয়ে। এর সুরাহা হয়নি। মগবাজারের পায়রাবাগ প্রকল্পের রেলওয়ের অতীব প্রয়োজনীয় সাড়ে ৬ শতাংশ জমি এক ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালত স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিমানবন্দর থেকে বিদ্যমান রেললাইনের ওপর ও পাশে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পর, ৩৭.৮ কিলোমিটারের মধ্যে ৬.১৯ কিলোমিটার ‘রাইট অফ ওয়ে’ রেলওয়ে অধিগ্রহণ করেছে। রেললাইনের বেড়িবাঁধ ও সাব-ব্যালাস্ট আগে নির্মাণ করা হলে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সময় তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।