পাহাড়ে পানি সংকট, ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ
পাহাড়ে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি পানীয় জল খাওয়ার সমান নয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে পাহাড়ি ঝরনা, ঝর্ণাধারা ইতিমধ্যে শুকিয়ে গেছে। ফলে পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় চেলাছড়া ওপরপাড়া। কাউখালী-ঘাগড়া সড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা দিয়ে গেলেই অবহেলিত গ্রামটি দেখা যায়। এই গ্রামে ৪২টি পরিবারের বসবাস। তাদের পেশা কৃষি। বিদ্যুৎ নেই। শিশুদের শিক্ষার জন্য কোনো স্কুল নেই। স্কুলে যেতে হলে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে দুই কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত ‘পাড়া কেন্দ্র’ থেকে শিশুদের স্কুলে পাঠাতে হয়। পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই গ্রামের মধ্য দিয়ে দুটি স্রোত বয়ে গেছে (ফুরমন)। কিন্তু এখন গ্রামের ছড়াগুলো শুকিয়ে মৃত ছড়ায় পরিণত হয়েছে। গ্রীষ্মকালে গ্রামের মানুষ শুধু কূপের পানির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কূপের পানি পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামে একটি নলকূপ ও দুটি রিং ওয়েল রয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি বাড়ে না।
শুধু কাউখালী উপজেলা নয়; রাঙামাটির বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
চেলাছড়া এপারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেখিন চাকমা জানান, আট থেকে ১০ ফুট মাটি খুঁড়েও পানি পাওয়া যায়নি। সমস্যায় পড়েছেন তারা।
সাধনা দেবী চাকমা, সূর্য তারা চাকমাসহ ওই গ্রামের একাধিক নারী জানান, এক কলস পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পানির জন্য প্রায়ই মারামারি হয়। শৈলশিরা শুকিয়ে যাওয়ায় পানির স্তর কমে যাওয়ায় কূপ থেকে পানি উঠছে না। গোসল করা তো দূরের কথা, ভাত খেয়ে হাত ধুতে হয়।
কারবারী (গ্রাম প্রধান) পাড়ার পূর্ণ বিকাশ চাকমা জানান, এ গ্রামে পানির সংকট তুলনামূলক বেশি। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। এক সময় জেলা পরিষদের সহায়তায় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গ্র্যাভিটি ফ্লো সিস্টেমের (জিএসএফ) মাধ্যমে পানি পাওয়া যেত। ২০১৭ সালের ভয়াবহ ভূমিধসের কারণে এটিও ধ্বংস হয়ে যায়।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের সাধারণ সম্পাদক হেফাজত বারী সবুজ বলেন, পাহাড়ে নির্বিচারে গাছ নিধন ও বন উজাড়ের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। যার কারণে পানির উৎসও কমে গেছে। এ ছাড়া পাহাড় থেকে পাথর অপসারণ ও পানির প্রাকৃতিক উৎস ধ্বংসের কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বিলাইছড়ির সদর ইউনিয়নের দীঘলছড়ি মনপাড়ায় উঁচু পাহাড়ে পানীয় ও খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে ৪৫টি পরিবার। পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, সেগুন চাষ, রিমা বা ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলন, পুরাতন ও পরিবেশবান্ধব গাছ অবাধে কাটা, জুম চাষের সময় নিয়ম না মানা ইত্যাদি কারণে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দেয়। .
ওই এলাকার কারবারী কান্দারা চাকমা ও দীঘলছড়ি সোম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কালিদাস চাকমা জানান, এ পাড়ায় একটি মাত্র কুয়া রয়েছে। পাহাড়ের অনেক নিচে, পানি সংগ্রহের জন্য ভোরবেলা সারি। মাঝে মাঝে পাওয়া যায় না।
বিলাইছড়ি উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেপ্রেশ তালুকদার জানান, দ্রুত পানি সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া জানান, সংকট নিরসনে বিভিন্ন এলাকায় পানির উৎস প্রকল্পের কাজ চলছে।