গাছ রক্ষার আন্দোলন উপেক্ষা করা হচ্ছে: রিজওয়ানা

0

রাজধানীর ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের ডিভাইডারে গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চলছে। মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, মেয়রকে চিঠি ও প্রতিবাদী গানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাঝখানে ক্ষোভ গাছে পড়ে। পরিবেশবাদী ও স্থানীয় বাসিন্দারা গত কয়েক রাত ধরে কোনো উপায় না দেখে নজরদারি করছেন। এত কিছুর পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে এখনো কোনো বার্তা আসেনি। পরিবেশ অধিদপ্তরও গাছ রক্ষায় নীরব। আন্দোলনকারীরা বলছেন, সাতমসজিদ সড়কের শেষ ৩০টি গাছ বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করবেন।

শিশু, যুবক, বৃদ্ধরা প্রতিদিন এ সড়কে যাতায়াত করে, তাদের সবার একই প্রশ্ন ‘কেন গাছ কাটা হচ্ছে?’ এমনকি সড়ক বিভাজক নির্মাণে আসা শ্রমিকরা হতাশা ও ক্ষুব্ধ। কারণ তাদের গাছ কাটতে বলা হয়নি, রাস্তা ঠিক করতে বলা হয়েছে। গত ৯ মে রাতে আর গাছ কাটবে না বলে ভেকু মেশিন নিয়ে চলে যায় মালিক।

উন্নয়নমূলক কাজের প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের রাস্তার পাশে গাছ কাটা শুরু করে। ৩০ জানুয়ারি বেশ কিছু গাছ কাটার পর স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ জানায়। পরে ৩১ জানুয়ারি প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন এলাকার শিশু, শিক্ষার্থী, পরিবেশবাদী, সমাজকর্মী, গবেষক, শিক্ষক, শিল্পীরা। এরপর তারা গাছ কাটা বন্ধ করে। সড়কে এবং কাটা গাছের জায়গায় সাত দিনের মধ্যে চারা রোপণের দাবি জানান। এরপর সাউথ সিটি রোড ডিভাইডার গাছ কাটা স্থগিত করে। এ ঘটনার প্রায় তিন মাস পর গত ১ মে রাতে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা আবাহনী মাঠ সংলগ্ন রাস্তার পাশের গাছ কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের বাধায় তারা গাছ কাটা বন্ধ করে দেয়। এরপর প্রতিবাদ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলতো সিটি করপোরেশন। গভীর রাতে গাছ কাটা ঠেকাতে গত কয়েকদিন ধরে পাহারা দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।

প্রতি রাতের মতো বুধবার রাতেও জাগরণ চলে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাত মসজিদ রোডে জড়ো হন পরিবেশবাদী ও স্থানীয় লোকজনসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। ধানমন্ডি-সাতমমসজিদ সড়কে নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে সাতমসজিদ সড়ক বৃক্ষ রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের আন্দোলনকে তুচ্ছ করা হচ্ছে। মেয়র বলেন, আমরা তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই আন্দোলন করছি। তবে তিনি জনস্বার্থে কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি। আমরা মেয়রের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। তিন দিন পরও তিনি আমাদের কাছে আসেননি। গাছ কাটা এড়াতে উন্নয়ন পরিকল্পনাও পরিবর্তন করা হয়। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর ও লালমাটিয়া সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গাছ কেটে রাস্তার মাঝখানে বালু ও কংক্রিট দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এটা কোন ধরনের উন্নয়ন? বিশুদ্ধ বাতাস খাওয়া আমাদের অধিকার। আশা করি মেয়র এ বিষয়ে কথা বলবেন। এক সপ্তাহ ধরে এত আন্দোলন করছি, সিটি হলে গিয়েও মেয়রের সঙ্গে দেখা হয়নি। এখন পর্যন্ত তিনি একবারও আমাদের ডাকেননি। সে মানুষের কথা শোনে না, বুঝতে চায় না। এটা না শুনলে এই শহর পীচের শহরে পরিণত হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *