ঐতিহ্যবাহী মশলা। আসছে চুই ঝাল গুঁড়া

0

চুই বা চই জাল। প্রাকৃতিক ঔষধি গুণে ভরপুর এই লতানো উদ্ভিদ এখন কে না জানে! খুলনা, সাতক্ষীরায় সুদূর অতীত থেকে রান্নার মসলা হিসেবে ব্যবহৃত এই চুইয়ের এখন সারা দেশে সমাদৃত। গরুর মাংস, খাসিসহ বিভিন্ন মাংস রান্নার স্বাদ বাড়ায় এমন মসলা চুই ঝাল নামে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সুপরিচিত। শীঘ্রই বাজারে আসছে এই চুই ঝাল গুঁড়া মসলা। ডুমুরিয়া উপজেলার বড়টিয়া গ্রামের কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মন্ডলের উদ্যোগে এই চুই ঝালের গুঁড়া শুধু স্থানীয় বাজারে নয়, সুদূর থাইল্যান্ডেও বিক্রি হবে।

শিকড়, ছাল ও ডাল রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ডার মেশিনে গুঁড়ো করে নিতে হয়। নবদ্বীপ জানিয়েছে যে তারা কৃষি অফিসের সহায়তায় ২০১৭ সালে চুই ঝালের বাণিজ্যিকীকরণের কাজ শুরু করেছিল। ২০১৮ সালে, তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের কাছে চুই ঝালের চারা বিক্রি করার পাশাপাশি এর চাষে উৎসাহিত করা শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। চুই ঢালের শিকড়, ডালপালা, লতা বিক্রি করে তাদের ভাগ্য বদলে যায়। কিন্তু সমস্যা হলো চুই লতা কাটার পর এর শিকড়, বাকল ও ডালপালা বেশিক্ষণ রাখা যায় না। অন্যদিকে, এটি একবার শুকনো কাঠ হয়ে গেলে এটি আর মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। কুরিয়ার করে চুইয়ের কাঁচা ডাল, শিকড় ও ভেষজ পাঠাতে প্রায়ই দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। তারপর চুই ঝাল নষ্ট হয়ে যায়। এর পরপরই তাদের মাথায় এলো পাউডার পিষানোর চিন্তা।

নবদ্বীপ বলেন, চুই ঝাল চিবিয়ে যে স্বাদ পাওয়া যায় তা গুঁড়ো মশলায় পাওয়া যায় না। কিন্তু গুঁড়া মশলারও দারুণ স্বাদ আছে। এবার তাদের উদ্ভাবিত এই চুই পাউডার নিয়ে শিগগিরই প্রথম থাইল্যান্ড যাবেন সাতক্ষীরার সাঈদ। বিদেশি বাজার ধরতে পারলে চুই ঝালের কদর বহুগুণ বেড়ে যাবে।

নবদ্বীপ মল্লিকের বাবা সুভাষ মল্লিক জানান, দেড় থেকে পাঁচ বছরের চুই ঝাল খেতে সুস্বাদু। চুই ঝাল গাছ দুই প্রকার। একটি চুই, যা মাটিতে; আরেকটি গাছ হল চুই, যা অন্য গাছের সাথে লতার মতো বেড়ে ওঠে। চুই ঝালের দুটি ভিন্ন স্বাদের। তবে ঘুটো চুই ঢালে স্বাদ বেশি।

নবদ্বীপ মল্লিকের স্ত্রী মুক্তা মল্লিক জানান, চুই ঝালের মসলা মূলত মুরোঘন্টা ও মাংসে ব্যবহৃত হয়। এটি খিচুড়ি ও মুড়ি মাখতেও ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন সবজিতেও চুই ঝাল দেওয়া যায়।

, ১২ কেজি চুইয়ের শিকড় ও ডাল শুকিয়ে এক কেজি গুঁড়া তৈরি করা হয়। ফলে এর দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। আমরা পাউডারের গুণমান ও ধরন অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করেছি। চুই ঝাল গুঁড়া বিক্রি হবে প্রতি কেজি ৫ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, নিউ আইল্যান্ড ও নিউটনই প্রথম কৃষি অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে মাদার প্ল্যান্ট উৎপাদন করে। এরপর থেকে তিনি চারা তৈরি করে বিক্রি করছেন। এ বছর এখন পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন তারা। নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মণ্ডল স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে চুই ঝাল পাউডার তৈরি করে বিদেশে পাঠাচ্ছেন। তারা থাইল্যান্ডে প্রথম চালান পাঠাচ্ছে।

তিনি বলেন, চুই ঝালকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের একটি প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় ৪-৫টি চুই গ্রাম থাকবে। এ গ্রামের প্রতিটি সদস্যের বাড়িতে অন্তত দুটি করে চুই ঝাল গাছ লাগানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *