তুমব্রু জিরো লাইনে আরও ২৭৬ রোহিঙ্গাকে উখিয়ায় স্থানান্তর

0

বান্দরবানের নাইক্ষ্যনছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকায় অবস্থানরত জিরো লাইনে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের তৃতীয় দিনে ৫১টি রোহিঙ্গা পরিবারের আরও ২৭৬ সদস্যকে কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বুধবার সকাল ১০টায় উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজার থেকে বাসে করে দুপুর সাড়ে ১২টায় উখিয়া কুতুপালং ট্রানজিটে পৌঁছান। এর আগে রোববার ও সোমবার ৮৯টি পরিবারের ৪৫৩ জন রোহিঙ্গাকে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ তথ্য নিশ্চিত করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, তুমব্রুর আরও ৫১টি রোহিঙ্গা পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এভাবে প্রতিদিনই চলছে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ।

গত শুক্র, সোম ও বুধবার ১৯২ পরিবারের ৭২৯ জন রোহিঙ্গাকে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আজ তৃতীয় দিনে ৫১টি রোহিঙ্গা পরিবারের ২৭৬ সদস্যকে কুতুপালংয়ে আনা হয়েছে। এর আগে গত দুই দিনে ৮৮ পরিবারের ৪৫৩ জন রোহিঙ্গাকে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে বান্দরবান সীমান্তের তুমব্রু থেকে রোহিঙ্গাদের প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। এরপর টোকেনের মাধ্যমে পরিচয়পত্রসহ বাসে করে কুতুপালংয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ট্রানজিট পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মতে, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ থেকে, যখন রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, তখন কেউ কেউ মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে ‘নো-ম্যানস ল্যান্ড’-এ আটকা পড়েছে। যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ সেখানে সাড়ে ৫ বছর ধরে বসবাস করছে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার। কিন্তু ১৮ জানুয়ারি রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এর মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে একজন নিহত হয় এবং প্রায় ৩,০০০ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে তুমব্রু গ্রামে আশ্রয় নেয়। জানুয়ারিতে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রোহিঙ্গাদের হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে একটি কমিটি।

রোহিঙ্গা নূর বাশার জিরো লাইনের বাসিন্দা ছিলেন। বাসে কুতুপালং যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘বাড়ি নেই, ঘর নেই, আগুনে সবকিছু পুড়ে গেছে। কোনো পণ্যসম্ভার সংরক্ষণ করতে পারেনি. কিছু আনা সম্ভব হয়নি। এমনকি বিছানার চাদর ও বালিশও রেহাই পায়নি। কোনো খাবার আনতে পারিনি। ২০১৭ সালে, আমি মিয়ানমার থেকে খালি হাতে পালিয়ে জিরো লাইনে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন সেখানে (শূন্য লাইনে) কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্টে খালি হাতে থাকবেন।’

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্টে আনা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের তথ্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তাদের ওইসব ক্যাম্পে পাঠানো হবে। আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ ও বাকিদের ছবি তোলার প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করা হবে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, তৃতীয় দিনে ৫১টি পরিবারের ২৭৬ জন রোহিঙ্গাকে উখিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। একই প্রক্রিয়ায় তুমব্রুতে থাকা বাকি রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *