কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটে অনিয়ম।আসামিদের বিষয়ে তদন্ত কমিটির ভুরিভোজ

0

তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাকে দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যান এমনকি তার সঙ্গে নৈশভোজেও যান যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ কাঞ্চন মালার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত, ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ, টাকার বিনিময়ে পছন্দের শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত নম্বর দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষক সম্প্রতি কাঞ্চন মালার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১৩টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) সুলতানা পারভীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- খুলনা নার্সিং কলেজের প্রভাষক লীলাবতী বিশ্বাস ও ঢাকা নার্সিং কলেজের নার্সিং ইন্সট্রাক্টর খোরশেদ আলম। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উপ-সচিব পরিচালক (শিক্ষা) রাশিদুল মান্নাফ কবির স্বাক্ষরিত আদেশে কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা পারভীনসহ তিন সদস্য তদন্তের জন্য গত বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়ায় আসেন। এরপর তারা অভিযোগকারীদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। এই পর্বের শেষে, ত্রয়ী ইনস্টিটিউটে কাঞ্চন মালা আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। উৎসবে থাকে সাদা ভাত, মুরগি ও গরুর মাংস, রো মাছ, গলদা চিংড়ি, ছোট মাছ, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা ও দই-মিষ্টি। তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দুপুরের খাবারে অংশ নেন প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও।

দুপুরের খাবারের পর বিকেলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা কাঞ্চন মালাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের এসি কোচে করে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চেনুরিয়ায় বাউল সম্রাট লালন শাহের বাড়িতে যান। এ সময় সবাই আখড়া বাড়ি ঘুরে লালন একাডেমির শিল্পীদের গান উপভোগ করেন। পরদিন শুক্রবার সকালে তারা কাঞ্চন মালাকে নার্সিং ইনস্টিটিউটের কোচে চড়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরের আম্রকাননসহ ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেন।

সূত্র জানায়, মুজিবনগরেও কমিটির সদস্যদের জন্য রাজকীয় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন কাঞ্চন মালা। মেহেরপুর থেকে সবাই সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ায় ফিরে রাত্রি যাপন করে। শনিবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা একসঙ্গে কুষ্টিয়া ত্যাগ করেন। যাওয়ার সময় কাঞ্চন মালা তাদের উপহার দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা পারভীন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, তিনজন আলোচনা করে আগামী সাত দিনের মধ্যে কাঞ্চন মালার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।

কমিটির সদস্য খোরশেদ আলম আসামি কাঞ্চন মালার সঙ্গে দর্শনীয় স্থান ও দুপুরের খাবারের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কাঞ্চন মালার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তাকে এখনো দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি। তাই আমি মনে করি না তাকে নিয়ে যেতে কোনো দোষ আছে।’

কাঞ্চন মালা বলেন, ‘ঢাকা থেকে তদন্ত দল এসেছে। বাইরে থেকে আসায় যানবাহনসহ সব বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে।’

কাঞ্চন মালা ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানে আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চলে আসছে। এর আগে কাঞ্চন মালার স্বেচ্ছাচারিতাসহ দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা বিক্ষোভ ও অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে দুটি তদন্ত করা হলেও অজ্ঞাত কারণে কাঞ্চন মালার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *