ঘন কুয়াশার কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ফসল

0

রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে শীতের সময়কাল ও তীব্রতা অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি। শীতের কারণে এসব এলাকায় বোরো ধানের চারা হলুদাভ হয়ে মরে যাচ্ছে। গাইবান্ধরের সাদুল্যপুরের কাজীবাড়ী সাঁতোলা গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন পাঁচ একর জমিতে বোরো বুননের জন্য একটি বীজতলা তৈরি করেছেন; কিন্তু চারা কম বাড়ছে। আরও কয়েকদিন ঘন কুয়াশা থাকলে পুরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। নীলফামারীতে বোরোর চারা হলুদাভ হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ায় কৃষকরা উদ্বিগ্ন। ঘন কুয়াশার কারণে শুধু বোরো ধানই নয়, সরিষা, আলুসহ রবি ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে।

বেশ কয়েকটি জেলার কৃষকরা জানান, কঠিন সময়েও তারা কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছেন না। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বোরোর চারা রক্ষায় বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়াসহ কৃষকদের বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় নিম্ন তাপমাত্রা বজায় থাকলে ধান, সরিষা, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে।

দুই সপ্তাহ ধরে সারাদেশে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে; ঘন কুয়াশা পড়ছে। যদিও গত রবিবার রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল, আবহাওয়াবিদরা জানুয়ারিতে আরও ঠান্ডা স্রোত এবং ঘন কুয়াশার আশঙ্কা করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরিষার আবাদ হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমিতে। ৬ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাদেশে ১ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ভুট্টার জমি ১ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর।

কৃষকরা জানান, রাতভর বৃষ্টির মতো ঘন কুয়াশার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে আলু ক্ষেতে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ দেখা দিয়েছে। ছত্রাকের কারণে পাতা পচে যাচ্ছে এবং গাছ মরে যাচ্ছে। একই কারণে বোরো ধানের বীজতলায় ‘ঠান্ডা আঘাত’ দেখা দিয়েছে। গাছ মরে যাচ্ছে। কৃষকরা আলু ক্ষেতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করছেন। কুয়াশা থেকে ধানের চারা বাঁচাতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে বীজতলা। অনেক সময় কাজ হয় না বলে জানান কৃষকরা।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআই) বোরো ফসলের কোনো ক্ষতি এড়াতে কৃষকদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। বলা হয়েছে, ঠান্ডা লাগার সময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ঠান্ডা স্পেল দীর্ঘ হলে, বীজতলা দিনরাত ঢেকে রাখতে হবে। বীজতলায় ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে নলকূপের পানি ব্যবহার করা ভালো। যাইহোক, প্রতিদিন এই পানি পরিবর্তন করার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং পাতায় লেগে থাকা শিশিরটিও নিষ্কাশন করা উচিত। কোনো কারণে চারা হলুদ হয়ে গেলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া জমিতে রোপণের জন্য কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ দিন বয়সী চারা ব্যবহার করতে হবে। এই বয়সের চারা রোপণ করলে শীতকালে চারার মৃত্যুহার কমে যায়।

ব্রি-এর মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবির বলেন, চিন্তার কিছু নেই। বোরো ধান উৎপাদনে শৈত্যপ্রবাহ খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। রবিবার রোদ দেখা গেল, তাপমাত্রা একটু বেড়েছে। পরামর্শ মেনে চললে চারা মরবে না, সতেজ থাকবে এবং ফলনও বেশি হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি মাস থেকে আম গাছে প্রচুর মুকুল আসে। দীর্ঘ শীতে আমের এই মুকুল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের আবহাওয়ায় মুকুলের ক্ষতি রোধ করতে প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম বোর্ডোমিক্সচার বা সালফিউরিক কীটনাশক মিশিয়ে আম গাছে ব্যবহার করতে হবে। তবে আম গাছে হপারের আক্রমণ হলে সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বোরো আবাদের জন্য ৩ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। মাঠ থেকে এখনো কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন কৃষকরা। আলুতে এখনও কোনো সমস্যার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঠাণ্ডা বেশিক্ষণ থাকলে তা আলুর পাতায় প্রভাব ফেলতে পারে। এ জন্য কৃষকদের কিছু কীটনাশক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে পাতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত না হয়। কারণ, এক মাসের মধ্যেই আলুর মূল ফলন উঠতে শুরু করবে। তিনি বলেন, শীতের কারণে সবজি ও ভুট্টার তেমন সমস্যা হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *