কম বেতনের সরকারি কর্মচারীরা হতাশায়

0

ভালো নেই কম বেতনের সরকারি কর্মচারীরা। প্রায় আট বছর আগে ঘোষিত বেতন কাঠামোতে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মচারীরা। এর মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। কর্মচারীরা বারবার বেতন বাড়ানোর দাবি জানালেও সরকারের কাছ থেকে কাঙ্খিত সাড়া পাচ্ছেন না। ফলে তাদের দিন কাটছে হতাশায়। সচিবালয়ে এবং সচিবালয়ের বাইরের ১০ থেকে ২০ গ্রেডের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কম বেতনে কর্মরত কর্মচারীরা বলছেন, অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবার পিছু ছয় সদস্যের বেতন হিসাব করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটা মেনে নিলেও কর্মচারীদের আয় কিছুটা বেশি হতো। একজন কর্মচারী নেতা উদাহরণ দিয়ে বলেন, সপ্তম বেতন কাঠামো অনুযায়ী ২০ গ্রেডের একজন কর্মচারীর মূল বেতন ছিল ৪ হাজার ১০০ টাকা। এর সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা যোগ করলে তা হবে ৫ হাজার ৬০০ টাকা। সর্বশেষ বেতন কাঠামোতে ছয় সদস্যের একটি পরিবারকে যদি এমন ধরা হয়, তাহলে মূল বেতন হতো ৮ হাজার ৪০০ টাকা। সর্বশেষ বেতন কাঠামোতে ২০তম গ্রেডে মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ২৫০ টাকা। সংখ্যার দিক থেকে এটি আগের বেতনের দ্বিগুণ বলে প্রতীয়মান হয়। প্রকৃতপক্ষে ছয় সদস্যের পরিবার হিসাব করলে মূল বেতন দেড়শ টাকা কমেছে। তাই কম বেতনভোগী কর্মচারীদের মজুরি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে- এই হিসাব মানতে নারাজ কর্মচারীরা। সর্বশেষ বেতন কাঠামো ঘোষণার পর কর্মচারীদের অসন্তোষের কথা জানতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী।

এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার তিন বছর পর ‘মজুরি বৈষম্য দূরীকরণে মন্ত্রিসভা কমিটি’ গঠন করে। ১ এপ্রিল, ২০১৯-এ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অর্থমন্ত্রী কর্তৃক আহবান করা ছয় সদস্যের মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সহকারী হিসেবে কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পাঁচ সদস্যকে মনোনীত করা হয়েছে।

আন্দোলনরত কর্মচারীদের একাধিক নেতা জানান, যতদূর জানা গেছে, মন্ত্রিসভা কমিটি গঠনের পর থেকে কর্মচারীদের কিছুই জানানো হয়নি। তাদের আক্ষেপ, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রী নিজে কমিটি গঠন করলেও মন্ত্রী পর্যায় থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আরেকটি সূত্র জানায়, গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির উদ্যোগে এ বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তা কখনই দিনের আলো দেখেনি।

তাদের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঘনিষ্ঠ কাউন্সিল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগের বেতন স্কেলের সাথে বর্তমান বেতন স্কেলের মধ্যে ব্যবধান তুলে ধরেন। ১৪ গ্রেডের এই কর্মচারী জানান, সর্বশেষ বেতন স্কেল অনুযায়ী তার মূল বেতন ১০ হাজার ২০০ টাকা। এই বেসিক অনুযায়ী ২০০৯ সালে সপ্তম বেতন স্কেলের সুবিধা যোগ করলে ১৬ বছর চাকরির পর তার বেতন হবে ২৮ হাজার ৮১০ টাকা। ২০১৫ সালের সর্বশেষ পে-স্কেলের ঘোষণা অনুযায়ী ১৬ বছর পর এই পদে একজন কর্মচারীর বেতন ২২ হাজার ৪৫০ টাকা। অর্থাৎ আগের বেতন স্কেলের সুবিধাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ওই গ্রেডের কর্মচারীর বেতন কমেছে ৬ হাজার ৩৬০ টাকা। একই গ্রেডের আরেক কর্মচারী সমকালকে বলেন, আমি যখন চাকরিতে যোগদান করি তখন জেনেছিলাম চাকরির দ্বিতীয় বর্ষে টাইপ টেস্টে পাস করলে একসঙ্গে দুটি ইনক্রিমেন্ট পান। নতুন বেতন কাঠামোর পর সেই সুবিধা বিলুপ্ত করা হয়েছে। ওই কর্মচারী বলেন, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা কমানোর কথা শুনিনি। এগুলো ক্রমশ বাড়ছে। আমাদের নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের পদোন্নতি ও কমানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে মোট বেতন বাড়লে কী হবে, সে বিষয়েও কথা ছিল।

বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান তাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে গত চার বছরে চারটি আপিল করেছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভা কর্মচারীদের জন্য রেশন ও টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড রক্ষণাবেক্ষণের দাবিতে সচিবের কাছে আপিল করে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়। মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, কর্মচারীদের অবস্থা ভালো নয়। বারবার দাবি জানিয়েও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। কর্মচারীদের অবস্থা খুবই খারাপ। আশা করি, সরকার বিষয়টি বুঝতে পারবে।

কর্মচারী ইউনিয়ন নেতারা দাবি করেছেন যে ২০১৫ সালে সর্বশেষ ঘোষিত বেতন কাঠামো কর্মীদের বেতন দ্বিগুণ করার প্রচারণাকে অতিরঞ্জিত করেছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তারা বলছেন, আগের বেতন কাঠামোতে অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা ছিল। তাদের বাদ দেওয়ার কারণে বর্তমান কাঠামোতে অর্থের পরিমাণ বাড়লেও উচ্চ বেতনের কর্মকর্তাদের বিপরীতে তাদের আয় কমেছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করলেও কোনো ফল আসেনি। এরপর হামলার কারণে স্বল্প বেতনের কর্মচারীদের সংগঠনগুলো দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামতে দ্বিধায় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *