গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।অর্থনৈতিক বিষয়ক পরিষদের বৈঠক

0

সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও সারের সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। মূল্যস্ফীতি এবং জনসাধারণের উপর বিরূপ প্রভাব বিবেচনা করে পণ্য ও পরিষেবার মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ভোক্তা পর্যায়ে দাম সহনীয় রাখতে সরকার দীর্ঘদিন ধরে এসব খাতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলোর দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে দেশেও। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ভর্তুকির পরিমাণও বাড়ছে। ফলে চাপে পড়েছে দেশের পুরো অর্থনীতি। এ কারণে বাজেট ব্যবস্থাপনা সংকটে পড়েছে। সার্বিক বিষয়টি বিবেচনায় রেখে জ্বালানি তেলের পর গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকির চাপ কমানোর প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ।

মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থ, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত সমন্বয় পরিষদের বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই বিভাগটি এ সুপারিশ করে। বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি ও পরিকল্পনা সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান কার্যত উপস্থিত ছিলেন।

এতে আমদানি-রপ্তানি, রাজস্ব সংগ্রহ, মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। এ বৈঠকের পর বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হয়। চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক ও বাজেট বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক এবং আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলন নিয়ে আলোচনা হয়।

আইএমএফ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য যখন আলোচনা চলছে এমন সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের অন্যতম শর্ত হল ভর্তুকি কমাতে হবে। বর্তমানে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (ইডি)  কৃষ্ণমূর্তি ভি সুব্রামানিয়ান বাংলাদেশে আছেন।

অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন সমন্বয় পরিষদকে বলেন, ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। খাদ্য ও জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। ভর্তুকি বাড়িয়েও পরিস্থিতির সমাধান করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানো ছাড়া আমদানি ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব নয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক আইনি মাধ্যমে রেমিটেন্স বাড়াতে আরও উদ্যোগ নেবে। এ ছাড়া রপ্তানি আরও বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। গতকালের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কোনো সংকটকে আমরা সংকট হিসেবে দেখি না। এগুলো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অনেক দেশই সংকটে রয়েছে। আমরা বৈশ্বিক পরিস্থিতি এড়াতে পারি না। আগামী বছর পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে।

তিনি আরও বলেন, আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি ফেব্রুয়ারিতে পাওয়ার কথা। অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও ঋণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরের বছর উল্লেখযোগ্য অর্থ পাওয়া যাবে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। মূল্যস্ফীতিও কমবে।

গত রোববার আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্যাস কেনার প্রকৃত খরচ দিতে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে সরকারের পক্ষে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভর্তুকি প্রত্যাহার করলে বিদ্যুতের দাম প্রায় ৩৪ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম প্রায় ৩১ শতাংশ বাড়বে।

আগামী বাজেট হবে সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকা : চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। যাইহোক, আগামী অর্থবছর ২০২৩-২৪-এর জন্য, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ এবং সাড়ে ৭ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য বাজেটের রূপরেখা ১00000000 কোটি টাকা। ৭৫০,০০০ এবং ১৯৪ কোটি টাকা উপস্থাপন করা হয়। রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এদিকে সংশোধিত বাজেট থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *