নয়াপল্টনে গুলিতে মকবুলের মৃত্যু।মামলার জন্য পুলিশের চাপ, পরিবার রাজি নয়
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত মকবুল হোসেনের পরিবার এখনো শোকে মুহ্যমান। এরই মধ্যে পুলিশ মামলা করার জন্য তার স্বজনদের চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু তার স্বজনরা রাজি হননি।
স্বজনদের অভিযোগ, গত শুক্রবার পুলিশ মকবুলের বাড়িতে যায়। নিহতের বিষয়ে থানায় মামলা করতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে তারা থানায় কোনো মামলা করবে না বলে জানিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মকবুলের এক আত্মীয় বলেন, ‘এখন মামলা দিয়ে কী হবে! আমি কি তাকে ফিরে পেতে পারি যে গেছে? মামলা নিয়ে ছুটাছুটি করে লাভ কী!’
পল্টন থানার ওসি সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, মকবুলের পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা মামলা করতে রাজি হচ্ছেন না। কিন্তু পুলিশ বাদী হিসেবে মামলা দায়ের করেন।
গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষে মকবুল নিহত হন। তার শরীরে অসংখ্য গুলির চিহ্ন রয়েছে। বিএনপি বলছে, পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে বিএনপি তাকে পল্লবী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্বচ্ছসেবক দলের নেতা দাবি করলেও তার পদ উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মকবুলের বড় ভাই আবদুর রহমান কাঁদছিলেন, ‘মকবুলের মেয়ে আট বছর বয়সে এতিম হয়েছে। তার দেখাশোনার দায়িত্ব নিলেও বাবার অভাব আমরা পূরণ করতে পারব না। এই বয়সেই মিথিলার মাথা থেকে বাবা নামের ছাতা সরে যায়।
এদিকে ওয়ারী এলাকায় যুবদলের নেতা ফয়সাল মেহবুব মিজুকে বাড়িতে না পেয়ে তার বাবা মিল্লাত হোসেনকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে এ ঘটনায় ওয়ারী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
মিল্লাত হোসেন ও মকবুলের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। দলটি নিহত মকবুলের পরিবারকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডেকে আর্থিক অনুদান দেয়।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য মকবুলের স্ত্রী হালিমা আক্তারকে সহায়তা হিসেবে এক লাখ টাকা হস্তান্তর করেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আবদুল মঈন খান ড. ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক নিহত মকবুলের মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন আজীবন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুরো পরিবারের ভরণপোষণের জন্য দলের পক্ষ থেকে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তারা।
গয়েশ্বর বলেন, মকবুল হত্যার ঘটনায় সরকার তার পরিবারসহ বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, মকবুল একজন পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এখন তার পরিবারের সদস্যরাও বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয়। তাদের দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, মকবুলের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার জীবন উৎসর্গ আমাদের পথ চলায় অনুপ্রেরণা ও শক্তি যোগাবে।
মকবুলের ভাই আবদুর রহমান জানান, তার ভাই কাপড়ের পুঁতি তৈরির কাজ করেন। তার বাড়ি পল্লবী থানার বাউনিয়া বাঁধে। তার স্ত্রী হালিমা একজন গৃহিণী। তাদের একমাত্র সন্তান মিথিলা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। মকবুলের উপার্জনে সংসার চলত। তিনি আরও বলেন, ছোট ছেলের মৃত্যুতে তার মা জহুরা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হচ্ছে না। সারাক্ষণ কাঁদে। মেয়েটিও বাবাকে খুঁজছে আর কাঁদছে।
এদিকে গত ৭ ডিসেম্বর রাতে যুবদল নেতা মিজুকে খুঁজতে ৪০-৫০ জনের একটি দল ওয়ারীর গোপী মোহন বসাক লেনে যায়। মিজুর পরিবারের অভিযোগ, তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। মিজু ওয়ারী থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাকে না পেয়ে বাড়ি ফেরার সময় মিজুর চাচা শাহাদাত হোসেন স্বপনকে দেখতে পান আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। মিজুর বাবা মিল্লাত হোসেন তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে বাধা দেন। পরিবারের দাবি, আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
তবে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন হাওলাদার জানান, মিজুকে খুঁজতে তার বাড়িতে কয়েকজন যায়। তাকে না পেয়ে তার বাবা মিল্লাত হোসেনের কাছে মিজুর অবস্থান জানতে চান। মিল্লাত হৃদরোগী ছিলেন। পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত করল। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না প্রমুখ মিল্লাতের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।