ভুল তথ্য প্রতিরোধ, সরকারের সাফল্য তুলে ধরার নির্দেশনা
যে কোনো ধরনের সংকট মোকাবিলায় সচিবদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মাসে অনুষ্ঠিত সচিব সভা শেষে লিখিত নির্দেশনায় এ কথা বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর ২৪টি নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বেশ কিছু বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনের বছর ও অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কায় সচিবদের এমন নির্দেশনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সচিবদের বৈঠকের আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা ইতিমধ্যেই সব সচিবের কাছে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে দেশে সচিব ও সচিবের সংখ্যা ৮৬।
নতুন বছরে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যাতে সংকটে না পড়ে সেজন্য আগাম সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সচিবদের কাছে পাঠানো নির্দেশনার প্রথম ধাপে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পতিত জমিতে ফসল ফলাতে হবে। বার্লি, তুলা প্রভৃতি ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতে কোনো জমি অনাবাদি না থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’ একই সঙ্গে কৃষি, বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা কার্যক্রম বাড়াতে বলা হয়েছে।
এছাড়া গাড়ি বা অন্য কোনো পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে। ডিজিটাল অপপ্রচার ঠেকাতে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় যুব সমাজকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। জঙ্গি বা সন্ত্রাসীরা যাতে দেশের অভ্যন্তরে অর্থ ও আশ্রয় না পায় সে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুব সমাজকে সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ মুক্ত রাখার পাশাপাশি খেলাধুলার চর্চা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত না করে উপযুক্ততা ও সম্ভাব্যতা বিবেচনা করে আমদানিকৃত পণ্য দেশেই উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে এবং বিনিয়োগ প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখী করতে হবে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আইসিটি ডিভাইসের মতো অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ ঘাটতি রোধে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি, শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে হবে। বিমানবন্দরের উপযুক্ত স্থানে সোলার প্যানেল বসানোর পাশাপাশি সেচ ব্যবস্থাকে সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাচন অগ্রাধিকার ভিত্তিক হতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব পরিহার করতে হবে। বিদেশি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
খাসমি ও ঘরের ব্যবস্থা করে কেউ যাতে গৃহহীন বা ভূমিহীন না থাকে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-২০৩০ এবং রূপকল্প-২০৪১-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সব মন্ত্রণালয়কে কাজ করার নির্দেশ দেন।
বিদেশী দেশের সাথে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক (MOU) অনুসরণ করতে হবে। সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক সময়মতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য সচিবদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ওয়েবসাইটগুলো নিয়মিত হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের সাফল্য ও উন্নয়নের তথ্য ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে। নিয়মিত কার্যকর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্লুইস গেট বা অন্য কোনো কারণে যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ জলাবদ্ধতার কারণে উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। বজ্রপাত প্রবণ এলাকায় তালগাছ লাগাতে হবে। সর্বস্তরে সুশাসন ও নৈতিকতার চর্চা বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে রেলপথকে নিরাপদ ও সচল রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রেলওয়ের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আগুন প্রতিরোধে আধুনিক অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি তাদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
সচিব সভার সিদ্ধান্ত স্টেকহোল্ডারদের অবহিত করতে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পৃথক সভা করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।