চব্বিশের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন।কক্সবাজারে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

0

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের পর ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। আমি আজ সেই  নির্বাচনে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।

বুধবার বিকেলে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীকে ‘নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন’ প্রশ্ন করা হলে জনতা হাত তুলে একমত হন। তিনি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কবির সঙ্গে কণ্ঠে বলেন, ‘শূন্য, আমি নিঃস্ব, আমার দেবার কিছু নেই/ আমার আছে শুধু ভালোবাসা, তাই দিয়ে গেলাম।’

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা ২০১৮ সালে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। আমরা আপনাদের কক্সবাজারের উন্নয়ন করেছি, আমরা পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে উন্নয়ন হচ্ছে এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

সাগরে ঘেরা সৈকতে যখন ফিনাইলের ঢেউ আছড়ে পড়ছিল, তখন লাখো মানুষের উল্লাস আর স্লোগানে মুখর ছিল প্রধানমন্ত্রীর জনসভা। এ সময় তার বক্তব্যে কখনো হাস্যরস, কখনো আবেগ, কখনো অভদ্র রূপ দেখা যায়। তার কথার ঢেউয়ে উচ্ছ্বসিত লাখো মানুষ।

বিএনপির দিকে ‘কামান ছুড়ে’ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তাপ ছড়ালেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বিএনপি, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপশাসনের কড়া সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-বিএনপি এদেশের মানুষকে কী দিয়েছে? অগ্নিসংযোগ, খুন, মানি লন্ডারিং-এটা দিয়েছে। ২১শে আগস্ট, ২০০৪, তারেক-খালেদা জিয়া বিকেলে আমাদের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালায়। যুদ্ধক্ষেত্রের গ্রেনেড আমাদের দিকে নিক্ষেপ করা হয়। আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মী মারা যান। আল্লাহর রহমতে আমি রক্ষা পেলাম।

একজন জীবিত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে কি-না এমন প্রশ্ন তুলে সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি, তারেক জিয়া, খালেদা জিয়ার আন্দোলন মানুষ পোড়ানোর আন্দোলন। ট্রেনে আগুন, বাসে আগুন, গাড়িতে, লঞ্চে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা। কোথায় আগুন লাগানো হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিন হাজার মানুষ পুড়ে গেছে, পাঁচশ মানুষ নিহত হয়েছে; প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়ি পুড়ে গেছে। তারা ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।

জনসভায় বঙ্গবন্ধু কক্সবাজারসহ সারাদেশের মানুষকে আবারও ভোট দিতে বলেন। তিনি বলেন, মা-বাবা ও ভাইকে হারিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সংগ্রাম করছি। আমার বাবা যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই চেতনা নিয়ে আমি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবং মানুষের উন্নত জীবনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সেটাই আমার দায়িত্ব।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ।

বিকেল সাড়ে ৩টায় জনসভাস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কক্সবাজারের উন্নয়নে ১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫৭১ কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে তার বক্তব্যে তিনি এসব উন্নয়ন প্রকল্পকে বিজয়ের মাসে কক্সবাজারবাসীর জন্য তার পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে উল্লেখ করেন।

কক্সবাজারের উন্নয়নের জন্য কাউকে দাবি করতে হয়নি; তিনি নিজেই উন্নয়ন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে টানেল তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। মাতারবাড়িতে নির্মাণ করা হচ্ছে এলএনজি টার্মিনাল। মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করা হচ্ছে, যেখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সমুদ্রের পানি স্পর্শ করতে পারবেন। এ ছাড়া জলবায়ু উদ্বাস্তুসহ দরিদ্র মানুষের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। টেকনাফের সাবরাংয়ে পর্যটন পার্ক করা হচ্ছে। উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে কক্সবাজার। সিঙ্গাপুরের চেয়েও সুন্দর হবে মহেশখালী-কুতুবদিয়া এলাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *