কুমিল্লায় বাধাহীন বিএনপির বড় সমাবেশ

0

বিগত বিভাগীয় গণসমাবেশে পরিবহন ধর্মঘট, হামলা ও বাধার পরও শনিবার কুমিল্লায় বড় সমাবেশ করেছে বিএনপি। কর্মসূচির আগে এত মামলা-গ্রেফতার হয়নি। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের পাহার-মহড়া ছিল না। পুলিশি তল্লাশি ছিল না। ইন্টারনেট কাজ করছিল যদিও এটি ধীর ছিল।

তবে বাধার আশঙ্কায় দুদিন আগে কুমিল্লার টাউন হল মাঠে জড়ো হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শনিবার বেলা ১১টায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। তবে সমাবেশস্থল আগে থেকেই নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সমাবেশটি কুমিল্লার কান্দিরপাড় রোডের পূবালী চত্বর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

আগের রাতে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে তাঁবুতে অবস্থান করেন। অনেকে গান বাজনা করে রাত কাটান। বৃহস্পতিবার থেকে টাউন হলে খাওয়া-দাওয়া। শনিবার সকালে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্ণিল টি-শার্ট ও টুপি পরিহিত বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিলে আসেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের সমাবেশকে আওয়ামী লীগের সমাবেশের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) গতকাল (বৃহস্পতিবার) যশোরে সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জনসভা করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে বিদায় দেখতে চায়। বিদায় বল।’

কুমিল্লার জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও আগের মতো নির্বাচন করতে তহবিল সংগ্রহ করছে। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যশোরে জনসভা করে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। তবে সুষ্ঠু ভোট হলে আওয়ামী লীগের কোনো নিশ্চয়তা থাকবে না। এই ভয়ে তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না।

বিএনপির সমাবেশ চলাকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে অবস্থান করেন। সাবেক মন্ত্রী মজিবুল হক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপিকে কোথাও থামানো হয়নি।

তবে বিএনপির অভিযোগ, কুমিল্লার বাইরে মুরাদনগর, ইলিয়টগঞ্জ, বাঙ্গোরা, লাকসাম, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, চৌমুহনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাখরাবাদেও অটোরিকশা চলতে দেওয়া হচ্ছে না। মুরাদনগর থানা যুবদলের সদস্য সচিব সৈয়দ হাসান আহমেদ জানান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে আসার পথে অনেকের ওপর হামলা হয়েছে। যারা সমাবেশে এসেছেন, তাদের দেখাশোনা করা হবে।

সমাবেশে প্রতিটি মোড়ে পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পূবালী চত্বরসহ আশপাশের ভবনগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিএনপি কর্মীদের বহনকারী একটি গাড়িও কুমিল্লায় প্রবেশ করতে বাধা পায়নি।

পরিবহন ধর্মঘট না থাকায় বিএনপি কর্মীরা বাস রিজার্ভ করে কুমিল্লায় আসেন; যা বরিশাল, খুলনা, রংপুর, ফরিদপুর ও সিলেটের বিধানসভায় ছিল অকল্পনীয়। বিএনপি নেতারা বলেন, অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কুমিল্লার ওপর দিয়ে গেছে। ধর্মঘট হলে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হবে। সরকার চাপে ছিল। তাই হরতাল ডাকা হয়নি।

শুক্রবার বিকেলে চাঁদপুর থেকে কুমিল্লার সংসদে আসেন ড. শাহজালাল বলেন, তিনি একটি পিকআপে আসেন। শীতের রাত কাটিয়েছেন সমাবেশের মাঠে। তার মতে, মিথ্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতারা খালাস পেয়েছেন। দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাড়িতে থাকা যায় না। কিন্তু ভয় নেই আর কি হবে।

ক্রাচে ভর করে সমাবেশে আসেন হাজীগঞ্জ ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা গুরুতর আহত হয়েছে। সবাই নিষেধ করলেও দলের ছদ্মবেশে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠে আসেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কর্মীদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম নয়ন মিয়া গণসমাবেশের লিফলেট বিতরণের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সমাবেশে নয়নের বাবার চোখে যে আগুন দেখেছিলাম তা দেশের মানুষের চোখেও জ্বলছে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজের ছেলে শাহরিয়ার কবির রাতুল ও সাইফুল ইসলাম হিরুর ছেলে রাফা ইসলাম। বাবাকে ফিরে পেতে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান তারা। হত্যার বিচার চেয়েছেন নয়নের বাবা রহমতুল্লাহ।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনুপস্থিতির মামলা আবারও শুরু হয়েছে নিজের খুশি মতো ভোট দিতে। তিনি বলেন, সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলায় জড়ানোর জন্য মিথ্যাচার করছে। তাদের লজ্জা নেই। তারা দুষ্টু।

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, যতই গায়েবি মামলা হোক না কেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ হবে। সরকার পূর্বাচল, ইজতেমা ময়দানে জনসমাবেশের স্থান দিতে চেয়েছিল। সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলে নয়াপল্টনও আসবে। নয়াপল্টনে সমাবেশ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *