পাঁচ বছর পর আজ যাচ্ছেন।প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে যশোরবাসী
পাঁচ বছর পর আজ যশোরে আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যশোরের মানুষ তাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। সকালে বিমান বাহিনী ঘাঁটি যশোর মতিউর রহমান শীতকালীন কুচকাওয়াজে যোগদান শেষে বিকেলে স্থানীয় শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে যশোর। ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও তোরণে ছেয়ে গেছে শহর ও গ্রামের রাস্তায়। মাইক চলছে। যশোরবাসী প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রত্যাশায়। মেডিকেল কলেজ ৫০০ শয্যা, বিমানবন্দর আধুনিকায়ন, ভাওয়াদহের জলাবদ্ধতা নিরসন, যশোর সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা ইত্যাদি।
গত কয়েক বছরে স্বপ্নের পদ্মা, মধুমতি সেতুসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ফলে যশোরসহ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জনজীবনে উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়ন ও পরিবর্তনের নেতৃত্বদানকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে এবং তার মুখ থেকে আগামীর বাণী শোনার জন্য যশোরের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০ বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যশোরে যে জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই ভাষণ দেবেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। করোনার তিন বছর পর প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের জনসভায় শারীরিকভাবে অংশ নিচ্ছেন তিনি। এই সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাজনৈতিক বার্তা দেবেন। অন্যান্য নির্বাচনের আগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে প্রচারণা শুরু হলেও এবার যশোর থেকে শুরু হচ্ছে নির্বাচনী কার্যক্রম।
এদিকে শেখ হাসিনার যশোরে আগমন উপলক্ষে একগুচ্ছ দাবিতে সোচ্চার সুশীল সমাজ। যশোরবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ও লেখালেখি করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। সুশীল সমাজের প্রত্যাশা, যশোরবাসীর দাবি বিবেচনায় নিয়ে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবেন।
যশোর মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, মেডিকেল কলেজ অস্তিত্বের এক মেয়াদেও হাসপাতালটি বাস্তবায়িত হয়নি। এটা যশোরবাসীর জন্য দুঃখজনক। আমরা অবিলম্বে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
এ ছাড়া যশোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান সাগরদন্ডীতে তার নামে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ যশোরবাসীর একাধিক দাবি রয়েছে।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জানান, জনসভাকে জনসমাবেশে পরিণত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বড় পর্দায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এনপি বলেন, এই জনসভায় খুলনা বিভাগের সাত জেলার আট লাখ মানুষ সমবেত হবেন। পুরো শহরে পা রাখার জায়গা নেই। জননেত্রীর জনসভা শেষ করতে এরই মধ্যে ৪শ’ সদস্য বিশিষ্ট স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১২০ ফুটের বিশাল নৌকার মাচা: জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, নৌকার আদলে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। নৌকাটির পরিমাপ ১২০ ফুট বাই ৪০ ফুট।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে প্রতিষ্ঠানে জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, সেই কোম্পানি কলরেডির মাইক্রোফোনে বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমবারের মতো দেশের ঐতিহ্যবাহী কোম্পানি কলরেডির মাইক্রোফোন প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আনা হয়েছে। যশোরে। জনসাধারণের বক্তৃতা সম্প্রচারের জন্য কোম্পানিটির শহর জুড়ে তিন শতাধিক মাইক্রোফোন থাকবে। নিখুঁত সাউন্ড সিস্টেম পেতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কালাররেডির মালিক ত্রিনাথ ঘোষ সাগর জানান, যশোরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় প্রায় আট লাখ লোকের সমাগম হবে বলে আয়োজকরা কালাররি সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার সূর্যকান্ত জানান, যশোর শামস-উল হুদা স্টেডিয়াম থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত সম্প্রচার করা হবে।
গতকাল রাতে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পাঁচ বছর পর যশোরে যে জনসভা হতে যাচ্ছে, তা জনসমুদ্রে রূপ নেবে। এ সময় দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।