একুশে বইমেলায় নতুন প্রকাশনা অনিশ্চিত

0

৯০ এর দশকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে, কুরায়া নামডাক প্রখ্যাত লেখকদের নতুন শৈলীর সৃজনশীল বই প্রকাশ করে আসছে। ১৯৮৮ সালে বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করে। এরপর আড়াই হাজারের বেশি বই প্রকাশিত হয়। মেলা প্রাঙ্গণে প্রকাশকের মণ্ডপে প্রতিবছর লেখক-পাঠকের ঢল নামে। তবে আসন্ন বইমেলায় নতুন বই প্রকাশ করা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক। গত শনিবার তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অমর একুশে বইমেলায় নতুন বই প্রকাশ না করার ঘোষণা দেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘কাগজের দাম বাড়ার কারণে অনন্যা এবারের মেলায় নতুন কোনো বই প্রকাশ করতে পারছেন না। এর জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

এমন বিদ্বেষপূর্ণ পরিস্থিতি শুধু অনন্যা প্রকাশনীর মনিরুল হকের জন্যই নয়। কাগজের স্বল্পতা, বই প্রকাশের প্রধান কাঁচামাল, ক্রমবর্ধমান দামের কারণে সব প্রকাশনা সংস্থারই এই অবস্থা। অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশকরা এখনও নতুন বই প্রকাশ ও পুনর্মুদ্রণ নিয়ে ব্যস্ত।

অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক বলেন, ‘কাগজের দাম বাড়ছে। বছরে কয়েকবার দাম বেড়ে এখন তিনগুণ। ৭০ গ্রাম ডিসি পেপার জানুয়ারিতে ১৪০০ টাকা ছিল, এখন তা ৩০০০ টাকার উপরে। এ বাজারে কাগজ কিনে বই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় দাম বাড়ানো হলে এত টাকায় কেউ বই কিনবে না। বইমেলায় বেশির ভাগ ক্রেতা ও পাঠক শিক্ষার্থী ও মধ্যবিত্ত। দাম তাদের নাগালের মধ্যে না থাকলে তারা বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। নভেম্বর থেকে বইমেলার প্রস্তুতি শুরু হয়। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে আপনার দম ধরার কোন সুযোগ নেই। এ সময় প্রকাশকদের কাগজ সংগ্রহ ও দাম নিয়ে ভাবতে হয়। গত বইমেলায় ১৩৫টি বই প্রকাশ করেছি। এবারের জানুয়ারিতে সংকট কিছুটা কমলে ২০-২৫টি বই প্রকাশ করতে পারব।

প্রকাশকের সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্যাটাসে সাড়া দিয়েছেন সাধারণ পাঠকরা। আহরাব রবিন নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘এটা বেশ হতাশাজনক। কাগজের দাম বৃদ্ধি প্রকাশক ও পাঠক উভয়েরই ক্ষতি।’

বাংলাবাজারের বিভিন্ন প্রকাশনা সূত্রে জানা গেছে, মান অনুযায়ী কাগজের দাম বেড়েছে ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত। ৬১ গ্রাম ডিসি সাইজের দাম ছয় মাসের মধ্যে ১১০০-১২০০ টাকা থেকে ২৪০০-২৬০০ টাকা পর্যন্ত; ৭০ গ্রাম ডিসি কাগজ ১৪০০ থেকে ৩০০০-৩২০০ টাকা; ৮০ গ্রাম ডিসি কাগজ ১৬০০ থেকে ৩৫০০-৪০০০ টাকা; ১০০ গ্রাম ডিসি কাগজ ২০০০-২২০০ থেকে ৪০০০-৫০০০ টাকা; আর্ট পেপার ২২০০-২৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫০০-৬৫০০ টাকা হয়েছে।

রোববার দেশের কয়েকজন তরুণ প্রকাশকের মধ্যে এক আলোচনায় নতুন বই প্রকাশ ও পুনর্মুদ্রণের বিষয়টি উঠে আসে। এ সময় দি ইউনিভার্সাল একাডেমির প্রকাশক শিহাব উদ্দিন ভূনিয়া বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি করা যাচ্ছে না। বাজারে কাগজ নেই। বেশি টাকা দিয়েও কাগজ মেলে না। দেশে পাওয়া কাগজের মান ভালো নয়; দাম কয়েকগুণ বেশি। এত দামে বই ছাপা যায় না। একটি বই বিভিন্ন উপায়ে পূর্ণ রূপ নেয়। গত বছর বইটি পাঠকদের দেওয়া হয়েছিল ৩০০ টাকায়, এ বছর বইটি প্রকাশ করতে খরচ হচ্ছে এক হাজার টাকা। এই বইটি কম দামে পাঠককে দেওয়া যাবে না। বইয়ের দাম ৮০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হলেও পাঠক কিনবেন না। এমনকি মানহীন দেশীয় কাগজে বই ছাপিয়েও পাঠককে দেওয়া যাবে না।’

বাংলাদেশ বই প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘কাগজের দাম তিনগুণ বাড়লেও বইয়ের দাম তিন গুণ বাড়ানো যাবে না। দাম বাড়ানো হলে পাঠক বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *