বাংলাদেশ-মার্কিন শ্রম সম্পর্ক।ধীরে চলো নীতিতে ঢাকা

0

তাজরীন অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার আগেও যুক্তরাষ্ট্র দেশটির কর্মপরিবেশ, শ্রমের মান ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। আর এই দুটি দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য বিশেষ শুল্ক ছাড়ের সুবিধা জিএসপি স্থগিত করা হয়। এছাড়া গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আটকে রেখে নির্যাতন, সমাবেশের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক সমাজের স্থান সংকুচিত করা, পুলিশ বাহিনীর ব্যবহার, গণতান্ত্রিক পরিবেশসহ বিভিন্ন মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সমালোচনা করে আসছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন। আর এখন এসবের পাশাপাশি ওয়াশিংটনও দেশটিতে শ্রমিক অধিকারের ওপর জোর দিচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে ঢাকা ‘গো স্লো’ নীতি অবলম্বন করছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রম ইস্যুতে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। চলতি মাসের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে যেহেতু এটি শ্রম ইস্যুতে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক, তাই বাংলাদেশ এটিকে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে পরিচিতির পরিবেশে রাখতে চায়। তাই মার্কিন প্রতিনিধি দলকে ঢাকা সফরে নিরুৎসাহিত করে কার্যত প্রথম বৈঠক করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

অক্টোবরের শেষে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা বাংলাদেশ সফরে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রথম বৈঠকের পর কার্যত তা করার সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকায় এলে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন- ঢাকা এখনই এটা চায় না।

কোন পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। বৈঠকটি ওয়ার্কিং গ্রুপ পর্যায়ের। তারা কর্মকর্তা নিয়োগ দিলে আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্বও ঠিক করা হবে। ২৫ থেকে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে যেকোনো দিন দুই ঘণ্টার বৈঠক হবে।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ই-মেইলে শ্রম ইস্যুতে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটির দূতাবাসের মুখপাত্র জেফ রাইডারন বলেন, সাধারণত আমরা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বা সফরের কোনো আগাম তথ্য দেই না। আমাদের কাছে তথ্য থাকলে আমরা সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জানাব।

চলতি বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক পরামর্শ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঢাকা ওয়াশিংটনকে ডিএফসি ফান্ডিং সুবিধার জন্য অনুরোধ করে। এই তহবিল পেতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে শ্রমের মান উন্নয়নের আহ্বান জানায়। এ জন্য তারা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথাও জানান।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের দ্বিতীয় উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক পরামর্শক বৈঠকে ওয়াশিংটন শুধুমাত্র শ্রম ইস্যুতে আলাদা ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক করার প্রস্তাব করেছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শ্রমিক অধিকার নিয়ে নতুন করে কোনো সমালোচনা শুনতে রাজি নয় ঢাকা।

এ ছাড়া সরকার এ খাতে এই সময়ে কোনো অসন্তোষ চায় না। ফলে নির্বাচনের আগে কোনোভাবে এই বৈঠক সম্পন্ন করতে পারলে ওয়াশিংটন মানবাধিকারের অন্যান্য বিষয় ছাড়াও শ্রম অধিকার নিয়ে খুব একটা এগোতে পারবে না। আর আগামী বছর যখন বৈঠক হওয়ার কথা তখন বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাবে। ফলে নির্বাচনের আগে শ্রমিক ইস্যুতে এটাই হবে দুই দেশের মধ্যে শেষ বৈঠক।

জানা গেছে, বাংলাদেশে কাজের পরিবেশ, শ্রমের মান ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে কঠোর হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শ্রম ইস্যুতে সরাসরি কাজ করতে প্রথমবারের মতো একজন শ্রম কর্মকর্তা যুক্ত করছে মার্কিন দূতাবাস।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কূটনীতিক বলেন, দূতাবাসের শ্রম কর্মকর্তা বাংলাদেশে শ্রম অধিকার, কাজের পরিবেশ, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও বৈষম্য, শ্রমের মানসহ সব বিষয় দেখভাল করবেন। শিগগিরই এই কর্মকর্তা ঢাকায় এসে দায়িত্ব নেবেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকারকে মানবাধিকার বলে মনে করে। তিনি বলেন, ঢাকা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ডিএফসি তহবিল পেতে চায়। আর এই তহবিল পেতে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফেরত পেতে হবে। বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে শ্রম কর্মকর্তার প্রতিবেদন জিএসপি ফেরত দিতে সহায়ক হবে।

প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়। সমিতির স্বাধীনতা এবং দর কষাকষির অধিকার, জোরপূর্বক শ্রম, শিশু শ্রম, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, পেশাগত বৈষম্য, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, ইউনিয়ন করার অধিকার, কর্মক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য শর্তাবলী, শ্রমিকদের কাজের সময় অন্তর্ভুক্ত। তবে এসব বিষয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দূতাবাসে নতুন কর্মকর্তারা যোগদান করলে দেশ থেকে এসব বিষয়ে আরও কঠোর প্রতিবেদন আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *