সীমান্ত বাণিজ্যের পতনও পর্যটনের জন্য অশনিসংকেত।মিয়ানমারে অস্থিরতা

0

বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা বাড়ছে। সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যে প্রতিদিনই সংঘর্ষ হচ্ছে। এরই মধ্যে একাধিকবার মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টার শেল এসেছে, এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গোলাগুলির শব্দে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং বান্দরবানের ঘুমধুম ও তুমব্রুতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশের পর্যটন শিল্প ও সীমান্ত বাণিজ্যে। নিরাপত্তার কারণে পিক সিজনেও টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শিগগিরই এই বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বিশেষ করে সেন্টমার্টিনে পর্যটন মৌসুম ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত চলে। টেকনাফ থেকে সাতটি জাহাজ ও ৩০টির বেশি ট্রলার সেন্টমার্টিন থেকে প্রতিদিন ৫-১০ হাজার পর্যটক পাঠায়। এছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে দুটি বিলাসবহুল জাহাজ চলাচল করে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, নাফ নদীতে নাব্য সংকটের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি।

সরকার সামুদ্রিক সংকটের কথা বললেও জাহাজ মালিকদের দাবি, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা রয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। মিয়ানমারের সম্ভাব্য মর্টার শেল থেকে পর্যটকদের রক্ষা করতে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত পর্যটক পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ মিয়ানমারের গোলা বা মর্টার শেল পর্যটন জাহাজের ওপর পড়তে পারে। নাফ নদী দুই দেশের মধ্যে সীমানা হিসেবে কাজ করে। এই নদীর ৭ কিলোমিটার মসৃণ নৌপথ খুবই বিপজ্জনক। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পার হতে হয়। এর ফলে পর্যটন ব্যবসা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসেন ইসলাম বাহাদুর বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে আমরা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছি। বিকল্প হিসেবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে জাহাজ চলাচল করছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরফানুল হক জানান, নাফ নদী দিয়ে নৌ-সংকট ও মিয়ানমার সীমান্তে সংঘাতের কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারের অস্থিরতার কারণে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ মংডু, আকিয়াব ও ইয়াঙ্গুন এই বন্দরের সঙ্গে যুক্ত। গত দেড় মাসে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি উভয়ই কমেছে।

মিয়ানমারের মংডুতে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। এ কারণে মংদু বন্দরের শুল্ক ও অভিবাসন কার্যক্রম সীমিত এবং বাণিজ্য কমে গেছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মাছ, খেলনা, প্লাস্টিক, তৈরি কাপড়, চিপস, অ্যালুমিনিয়াম-সামগ্রী, ওষুধ, প্রসাধনী, চুল ও খাদ্য সামগ্রী রপ্তানি হয়। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে কাঠ, চাল, ডাল, সুপারি, আদা, হলুদ, গোলমরিচ, পেঁয়াজ, শুকনো শিম, ছোলা, আচার ইত্যাদি আমদানি করা হয়।

মঙ্গলবার দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে আকিয়াবায় রপ্তানির জন্য একটি জাহাজে খাদ্যসামগ্রী বোঝাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া পুরো টেকনাফ বন্দর নিস্তব্ধ। অলস সময় কাটাচ্ছেন অধিকাংশ শ্রমিক ও বন্দর কর্মকর্তারা।

টেকনাফ ল্যান্ডপোর্ট সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, মংডুতে পরিস্থিতি থমকে গেছে। সেখান থেকে ট্রলারে করে কোনো পণ্য আমদানি করা যাবে না। বিশেষ করে মংডুতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কাঠ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বন্দরনগরী আকিয়াব থেকে কয়েকটি ট্রলার বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন জলসীমা হয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *